স্বাধীনতার পর দেশে সবচেয়ে বেশি ৯ বার ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২য় সর্বোচ্চ ৭ বার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচন হয়। পরিসংখ্যানে আরো পিছিয়ে বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
পঞ্চাশোর্ধ বাংলাদেশে এত কম ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়ার কারণ কী? ইতিহাস বলে, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ১টি ছাড়া বাকি সব নির্বাচন হয়েছিলো বিংশ শতাব্দীতে। দেড়যুগ পর ২০১৯ এ ডাকসু নির্বাচন হলেও সেটি নিয়েও রয়েছে বিতর্ক।
একবিংশ শতাব্দীতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ার মূল কারণ দলীয় লেজুড়বৃত্তি ও স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা। ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থান হওয়ার পর এসব অনিয়ম কাটিয়ে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ এসেছে ক্যাম্পাসগুলোতে। ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো এটিকে গণতন্ত্র চর্চার বড় ক্ষেত্র হিসেবে দেখছে।
বাংলাদেশ জাতীয় ছাত্র সমাজের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে আমরা যে গণতন্ত্রের কথা বলি সে গণতন্ত্রের আসল সৌন্দর্য্য হলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব নিয়ে আসতে হয়। সেক্ষেত্রে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিকল্প নেই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনটা যদি দুই তিন মাস পরেও হয়, নির্বাচনটা এমনভাবে করা উচিত যাতে করে যখন ডাকসু আসবে তখন যেন প্রতিটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মনে হয় ছাত্র সংসদ একটা কার্যকরী জিনিস।’
দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন নিয়ে দেখা দেয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ মনে করছেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সম্ভব ডাকসুসহ ক্যাম্পাসের ছাত্র সংসদ নির্বাচন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ একদম উপজেলা পর্যায়ে যদি আমরা ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে পারি তাহলে সারাদেশে একটা নেতৃত্ব উঠে আসবে, তারা আগামী দিনে দেশ পরিচালনা করবেন। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হবে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে শুধু ডাকসু না সব ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে একটা কমন দিক নির্দেশনা থাকলে আমার মনে হয় তিন চার মাসের মধ্যে সবগুলো ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে। এবং আগামী কিছু মাসের মধ্যে আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকতে হবে।’
ছাত্রশিবির দ্রুত নির্বাচনের আয়োজনের পক্ষে। বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলেই সম্ভব।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো ছাত্র সংগঠনের প্রস্তুতি নিতে হবে, এজন্য সময় দিতে হবে এটা অযৌক্তিক বিষয়। এখানে প্রস্তুতির তেমন কিছুই নেই। ফাইন্যান্সিয়াল একটা এনগেজমেন্ট আছে, সারা পৃথিবীর একটা এনগেজমেন্ট আছে, রাষ্ট্রের এনগেজমেন্ট আছে এমন কোনো বিষয় না।’
তিনি বলেন, ‘নীতিমালা সংশোধন করতে সর্বোচ্চ এক মাস লাগতে পারে। আর এক দুই মাসের মধ্যে স্থায়ী ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনটাও করা সম্ভব।’
তবে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের চিন্তাকে স্বাগত জানিয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার করেই হোক নির্বাচন।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, আগামী মাস বা তার পরের মাস বা দুই থেকে তিন মাস এরকম যাবতীয় যে একটা নির্দিষ্ট টাইম ফ্রেম আমরা সেটা বেধে দিতে পারি না। এটি ছাত্র সংসদ নির্বাচন বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্যরা নির্ধারণ করতে পারবে। কিন্তু সংস্কারের বিষয়গুলো যেন প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে সংস্কার করে সে বিষয়ে আমরা আমাদের পরিকল্পনাগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দ্রুত পৌঁছে দেয়ারে প্রত্যাশা রাখছি।’
মত পার্থক্য নিরসন করে নির্বাচন দেয়ার পরামর্শ সাবেক ছাত্র নেতাদের।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘নেতা নির্বাচন সম্পর্কে একটা ধারণা হলো। একটা নেতৃত্ব গড়ে উঠলো। আমরা অনেক সময় বলিনা ডাকসুর ভিপি-জিএস কতজন এসেছে যারা জাতীয় রাজনীতিতে ভূমিকা রেখেছে। তো এটার মধ্য দিয়ে নেতৃত্বের বিকাশের সম্ভাবনা থাকে।’
তিনি বলেন, ‘বড় দুটি গ্রুপের মধ্যেই মত পার্থক্য আছে। এটা নিরসন করেই নির্বাচন করলে ভালো।’
ছাত্র সংগঠনগুলোর চাওয়া পাওয়ার ভিড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিজের অধিকার কতটা ফিরে পায়- সেটিই এখন দেখার বিষয়।