দেশে এখন
0

'২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় পলাশীর ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল'

২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় পলাশীর ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল উল্লেখ করে তদন্ত কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল ফজলুর রহমান বলেছেন, বিডিআর সদস্যদের সহযোগিতা নিয়ে বিদেশিরা এসে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলো। আজ (সোমবার, ৬ জানুয়ারি) সকালে নিহত সেনা পরিবারের সদস্যদের সাথে মতবিনিময়ে তিনি আরও বলেন, তদন্তের স্বার্থে ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরত না পাঠালে কমিশন অনুমতি নিয়ে ভারতে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। এসময়, খালেদা জিয়াকে তার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বের করার জন্য পিলখানায় নিহতদের পরিবারকে ব্যবহার করা হয়েছে, বলে অভিযোগ করা হয়।

হাতে স্বামী মেজর তানভীর হায়দারের তিনটি ডেথ সার্টিফিকেট। স্ত্রী তাসনুভা বলছিলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের শিকার স্বামীর মরদেহটাও পাননি তিনি। উল্টো গেল ১৫ বছরে কি কি সহ্য করতে হয়েছে তাকে। সেনাবাহিনীর চাকরি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও স্বামীর পরিচয় জানার পর বাদ দেয়া হয়েছে সন্তানকে।

স্ত্রী তাসনুভা বলেন, ‘আমার স্বামীর এখন পর্যন্ত লাশ পাইনি। কোনো লাশ পাওয়া যায়নি। কেউ বলে লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে আবার কেউ বলে লাশ বর্ডারে ফেলে দেয়া হয়েছে। আমার ৬৫৪ নাম্বার কবরের সামনে গিয়ে নাটক করতে তো ভালো লাগে না।’

তদন্ত কমিশনের সাথে মতবিনিময়ে এসে এদিনও নিহত সেনা পরিবারের সদস্যদের কণ্ঠে আক্ষেপ। একই দাবি, রাষ্ট্রীয়ভাবে ভাবে শহীদ মর্যাদা, ২৫ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস আর ইতিহাসের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার। তারা বলছেন, সেনাবাহিনীকে দুর্বল করতেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বের করতে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে তাদের।

সেনা পরিবারের একজন সদস্য বলেন, ‘শহীদ সেনা দিবসটা যেন জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। আমাদের চাওয়া না এইটা দাবি।’

তাদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কমিশনের এক সদস্যের বিরুদ্ধেও। দাবি করছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহনেওয়াজ খান স্বৈরাচারের দোসর।

সেনা পরিবারের আরেকজন সদস্য বলেন, ‘এই কমিশনের একজন সদস্য নিয়ে আমাদের অভিযোগ রয়েছে।’

হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শীরা দিলেন সেদিনের ঘটনার ভয়াবহ বর্ণনা। বললেন, গেল ১৫ বছরে মুখ বন্ধ রাখতে কি কি ঘটেছে তাদের সাথে।

আরেকজন সদস্য বলেন, ‘অস্ত্রাগারের সমস্ত অস্ত্র নিয়ে তারা যেভাবে আমাদের ও আমাদের পরিবারের উপর ঝাপিয়ে পড়েছিল তাদের উল্লাস দেখেছি।’

সবশেষ কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল ফজলুর রহমান, সেনা পরিবারের সদস্যদের সামনে তদন্তের রূপরেখা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরের ঘটনা ও ভারতের সংশ্লিষ্টতার বিষয় দুভাগে ভাগ করে তদন্ত কাজ করা হবে। ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানা হত্যাকাণ্ডকে পলাশীর ঘটনার পুনরাবৃত্তি বলেন তিনি।

জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল ফজলুর রহমান বলেন, ‘২৫ ফেব্রুয়ারি পলাশীর পুনরাবৃত্তি হয়েছে সেখানে যা আমরা দেখেছি। আর্মি দাঁড়িয়েছিল। আর বিদেশিরা এসে এই হত্যাযোগ্য চালিয়েছে। আমি মনে করি না এইটা বিডিআর বিদ্রোহ ছিল। আমি মনে করি না কোনো দাবি আদায়ের জন্য সৈনিকরা আমাদের অফিসারদেরকে হত্যা করতে পারে।’

মেজর জেনারেলের ফজরুল রহমান এসময় পরিবারের সদস্যদের বলেন, তার কমিশন এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচার করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরত না দিলে তদন্তের স্বার্থে কমিশন অনুমতি নিয়ে ভারতে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।

মেজর জেনারেল ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমরা যাদেরকে সন্দেহ করি বিশেষ করে শেখ হাসিনাকে। তিনি এখন ভারতে আছেন। আমরা চেষ্টা করবো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা সরাসরি আমাদের টিম সেখানে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ অথবা ভারতের হাইকমিশনকে বলো তাকে ফেরত দিতে।’

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের অনেক প্রমাণ নষ্ট করে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে কমিশন প্রধান বলেন, তদন্তে এমন সুপারিশ করা হবে যাতে বাংলাদেশে কোনোদিন ২৫ ফেব্রুয়ারির মতো ঘটনা না ঘটে।

ইএ