রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ, জুলাই স্মৃতিতে কাতর, বিষণ্ণ, বিমর্ষ, অসহায়। এখানে আগত পরিবারগুলোয় শহীদ হয়েছে কারো স্বামী, সন্তান বা একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি। কোনো মায়ের, স্বপ্ন পুড়েছে আশুলিয়ায়, কারো স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে নারায়ণগঞ্জের পথে।
এই যেমন রাজশাহীর ফরাদপুর গ্রামের নুরেসান খাতুন। জুলাই আন্দোলনে, স্বামী মিনারুল ইসলামকে যখন হারিয়েছেন তখন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা তিনি।
আট বছর চেষ্টা করে যে সন্তানের সুখবর পেয়েছিলেন, স্বৈরাচার মুক্তির আন্দোলনে এক গুলিতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়েছে সে স্বপ্ন, যা এখন শুধুই অশ্রু হয়ে গড়ায় দুচোখ বেয়ে। রাজশাহী বিভাগ জুড়ে এমন ৬৩টি শহীদ পরিবারের পাশে আর্থিক সহায়তা নিয়ে দাঁড়িয়েছে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন।
সহায়তা দিতে আজ (শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে বারোটায় শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে আসেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক। এ সময় আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয় অডিটোরিয়ামে। সারজিসকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সন্তানহারা মা, ভাই, বাবাসহ নিহতের স্বজনরা। চান আপন হারানোর বিচার।
পরে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও ২৪ এর শহীদদের স্মরণ করে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর পুলিশকে শহীদ পরিবারদের মামলাসহ নানা বিষয়ে সহায়তা করতে বলেন বক্তারা। এছাড়াও নিজেদের মোরালিটি বাড়িয়ে দেশের স্বার্থে কাজ করার আহ্বান জানান তারা।
পরে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম জানান, এই ফাউন্ডেশন সর্বোচ্চটুকু দিয়ে শহীদের সহযোগিতা করবে।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেন, ‘এ গণহত্যার সঙ্গে জড়িত খুনি শেখ হাসিনা ও তার দোসর, তারা হোক আওয়ামী লীগের বা হোক যুবলীগের তাদের যে শাস্তি তা বাংলাদেশের মাটিতে নিশ্চিত করতে হবে।’
এছাড়াও শহীদদের আর্থিক সহযোগিতার এ অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, শেখ মুজিব ভারতের কাছে দেশ ইজারা দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইলে খুনি হাসিনাকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
সারজিস আলম আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর যে সকল সদস্য এ গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের বিচারিক প্রক্রিয়ায় আপনারা যারা জড়িত ছিলেন না, আপনারা যদি সহযোগিতা না করেন বা আপনারা যদি সে মামলাগুলো সর্বশেষ পর্যন্ত যাওয়ার জন্য সাহায্য না করেন, তাহলে মনে রাখবেন, তারা প্রত্যক্ষভাবে ওই খুনের সঙ্গে জড়িত আর আপনার পরোক্ষভাবে ওই খুনের সঙ্গে জড়িত হবেন।’
এর পর, অনুষ্ঠানে আগত বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশের ডিআইজি, জেলা প্রশাসকসহ অন্যান্য অতিথিরা বক্তব্য রাখেন। পরে অতিথিরা সবাই মিলে রাজশাহী বিভাগের ৪৩ জন শহীদ পরিবারের প্রত্যেক পরিবারের হাতে ৫ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেয়া হয়।