দেশে এখন
0

গণঅভ্যুত্থানে শহীদের পরিচয় দ্রুত শনাক্ত ও গণহত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি ভুক্তভোগী পরিবারের

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ১২৭টি কবরের সন্ধান মেলার পর মরদেহগুলোর ডিএনএ টেস্টের দাবি উঠে। গণকবর শনাক্তে আইনি লড়াই করার কথাও বলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, আদালতের নির্দেশনা পেলেই মরদেহ শনাক্তের কাজ শুরু হবে। এমন প্রেক্ষাপটে সব শহীদের পরিচয় দ্রুত শনাক্ত ও গণহত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি ভুক্তভোগী পরিবারের।

জুলাইয়ের শুরু থেকে আগস্টের ৫ তারিখ চরম রাষ্ট্রীয় নিপীড়নে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে অনেক পরিবার। কোন কোন পরিবার নিহত স্বজনদের সন্ধান পেলেও কেউবা এখনো খুঁজছেন হন্য হয়ে।

তাদেরই একজন নার্জিয়া আক্তার ও তার সন্তান মুহাম্মদ রাইয়ান। সাড়ে চার মাস ধরে হৃদয়ের ক্ষত চেপে স্বামী ও বাবাকে খুঁজছেন তারা? কতটা ক্ষত মনের গহীনে নিয়ে এত বিষাদ আর হাহাকার তরুণ যুবকের?

মুহাম্মদ রাইয়ান বলেন, ‘যারা স্বজন হারিয়েছে তারায় একমাত্র বুঝে তাদের পেইন কেমন। কষ্টটা কোথায়?। আমরা বাবা গিয়েছে আমি বুঝতেছি আমার কষ্ট কেমন হচ্ছে।’

বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের দাবিতে জুলাইয়ে দেশব্যাপী যখন প্রবল প্রতিরোধ। তখন তা দমানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও আন্দোলন দমনে গুলি চালাতে দেখা যায়। ফলে বিধ্বংসী হয়ে ওঠা রাষ্ট্র যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যার শিকার হয় সহস্রাধিক মানুষ, অভিযোগ ওঠে গণহত্যার।

পরিবারটি দাবি করছিলো ১৮ জুলাই রাজধানীর গোলাপবাগে আন্দোলন চলাকালে পুলিশের সহায়তায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কুপিয়ে হত্যা করে রফিকুল ইসলামকে। পরবর্তীতে হাসপাতাল থেকে মর্গ কিংবা ময়লার ভাগাড়ে খোঁজাখুঁজির পর আঞ্জুমান মফিদুলের মাধ্যমে খোঁজ মেলে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে।

 রাইয়ানের মা বলেন, ‘এখানে এসে আমি বলতে পারছি না এইটা আমার স্বামীর কবর।’

পরিবারটি যখন গণকবরের কথা বলছে তখন আমরা এই কবরস্থানের মসজিদের ইমামের কাছে জানতে চাই ঘটনার সত্যতা নিয়ে।

মসজিদের ইমাম বলেন, ‘জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে আগস্ট মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত ৮১ টা কবর শনাক্ত করা হয়েছে।’

ইমামের কথার সূত্র ধরে আঞ্জুমান মফিদুলের মুখপাত্রের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও মেলেনি সদুত্তর।

আঞ্জুমান মফিদুলের মুখপাত্র আজিম বক্স বলেন, ‘এই বিষয়ে আমাদের যে দাফন সেবা অফিসার আছে তার সাথে কথা বলতে হবে। তার তথ্য আমি না পেলে তো বলতে পারছি না। আর আমি এখন অসুস্থ।’ 

যারা প্রথম এই গণকবরের সন্ধান দেন সেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলছেন ১২৭ টি কবরের সন্ধান পেয়েছেন তারা। ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে লাশ শনাক্ত করে পরিবারগুলোর কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানানোর পাশাপাশি গণহত্যার সাথে যারা জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় যাবার কথাও বলছেন তরুণ এ নেতারা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, ‘যারা মারা গিয়েছে তারা আসলে শহীদ। আমাদের কাছে মনে হয় অন্তর্বর্তী সরকারে একটা দায়িত্ব হচ্ছে শহীদদের লাশ শনাক্ত করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রিফাত রশিদ বলেন, ‘আমরা একটা পেপারস রেডি করছি। সেটা যে যে মন্ত্রণালয়ে দেয়া দরকার সেখানে প্রেরণ করা হবে।’

এদিকে ডিএনএ স্যাম্পলিং করার জন্য কোর্ট থেকে নির্দেশনা আসার অপেক্ষায় আছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘বেওয়ারিশ লাশ যদি দাফন করা হয়। সেখানে যদি লাশ চিহ্নিত করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বাদি হয়ে মামলা করে সেক্ষেত্রে আদালত থেকে আদেশ আসলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে স্যাম্পল টেস্ট করবে।

দ্রুত সময়ের মধ্যে কবরগুলো চিহ্নিত করে পরিবারের কাছে মরদেহগুলো ফিরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি সুষ্ঠু বিচারের প্রত্যাশা ভুক্তভোগীদের।

ইএ