প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারি, লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় ধাপে ধাপে উত্তীর্ণ হয়ে ক্যাডার সার্ভিসে যুক্ত হন দেশের মেধাবীরা। তবে, অভিযোগ আছে, ২৫টি ক্যাডারের মধ্যে সুযোগ সুবিধা নিয়ে রয়েছে নানা বৈষম্য ও অবহেলা।
প্রশাসন ক্যাডারে সবাই গ্রেড-১ এ যেতে পারলেও ২০টি ক্যাডারেই এই পদ নেই। কোনো ক্যাডারে দ্বিতীয় ও তৃতীয় গ্রেড পর্যন্ত নেই। আবার কয়েকটি ক্যাডারে গ্রেড-১ থাকলেও মাত্র ১টি বা ২টি পদ আছে। অন্য দিকে শিক্ষা, সমবায়, পরিবার পরিকল্পনা, পরিসংখ্যান ও বাণিজ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা যেতে পারেন সর্বোচ্চ ৪র্থ গ্রেড পর্যন্ত। যেখানে পদোন্নতি বঞ্চিত হয়ে কেউ কেউ সেটাও পান না।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আন্তঃক্যাডার বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করে। ১৯৯৮ সালে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৭৫ শতাংশ কোটা রেখে অন্যান্য ক্যাডারের জন্য বরাদ্দ হয় ২৫ শতাংশ। ২০০২ সালে, এ ধরনের কোটা সংরক্ষণ সম্পূর্ণ বেআইনি বলে রায় দেন হাইকোর্ট। কিন্তু কর্তৃত্ববাদী সরকারের নির্দেশে চলতি বছরের ২৪ মে ফের চালু হয় কোটা সংরক্ষণ।
এ ধরনের আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন নিয়ে গোল টেবিল বৈঠক অংশ নেন বিভিন্ন ক্যাডারের সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তারা। তুলে ধরেন বৈষম্যের কথা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক আহমেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘আমারে পঞ্চম গ্রেড থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কিন্তু আমার বন্ধুরা গ্রেড-১ সিনিয়র সচিব হিসাবে বিদায় নিয়েছে।’
বক্তারা বলেন, প্রত্যেক কর্মকর্তার সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের শীর্ষ পদে বা নীতি নির্ধারণী পদে যাওয়ার সুযোগ রাখতে হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি বলেন, ‘তাদেরকে যে কারণে ক্যাডার করা হয়েছিল। সেইসব ক্যাডারদেরকে তাদের সর্বোচ্চ পদ পর্যন্ত যেতে দিতে হবে।’
গোলটেবিলে সরকারি কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহারেরও সমালোচনা করা হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী বলেন, ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের উত্থানে ভূমিকা রেখেছেন প্রশাসন ক্যাডার। তাদের সহায়তা ছাড়া গত ৩টি একতরফা নির্বাচন করা সম্ভব হতো বলেও মত তার।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে গত নির্বাচনগুলোতে তাকে সহায়তা না করলে সে জিততে পারতো না বা এইরকম নির্বাচন হতো না।’
অর্থপাচার হওয়ায় দেশের যে ক্ষতি তার চেয়ে বেশি ক্ষতি মেধা পাচারে। দেশের মেধাকে দেশেই ধরে রাখতে হলে ক্যাডার বৈষম্য দূর করা এখন সময়ের দাবি বলে মনে করেন আলোচনায় বক্তারা। শিক্ষা ও সিভিল সার্ভিসের সংশোধনেও দিতে হবে জোর।