স্থানীয়দের কাছে নিতাই বা পাগলা নামে পরিচিত এই নদীর উৎপত্তি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে। ময়মনসিংহের ধোবাউড়া সীমান্ত দিয়ে নদীটি প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। অনিন্দ্য সুন্দর নদী নিতাই। যেন পাহাড়ি ঝর্ণার মনোমুগ্ধকর চলমান ধারা। মেঘের কোলে মাথা গুঁজে থাকা উচুঁ পাহাড়ের নিচে সলাজ নদীটি তার প্রাকৃতিক রূপ স্নিগ্ধতায় আবেগ আর প্রকৃতির এক অসাধারণ সিম্ফনি তুলে ধরে। তবে, সারা বছর শান্ত প্রবহমান নিতাই নদী ঢলের পানিতে হয়ে ওঠে ভয়ংকর।
সম্প্রতি অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে ভেসে গেছে ধোবাউড়ার জিগাতলা গ্রামের বৃদ্ধা চিকনি খাতুনের বসতভিটা। কোনো রকমে জীবন বাঁচলেও সর্বস্ব হারিয়ে তিনি এখন নিঃস্ব। পাহাড়ি ঢলের তোরে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা। স্রোত থেকে রেহাই পায়নি বসতভিটা, ঘরবাড়ি, কবরস্থান- কিছুই। নির্মাণের পর দীর্ঘদিন কোনো সংস্কার কাজ না হওয়ায় বাঁধ ভেঙ্গেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
২০০৪ সালে নির্মিত এই বেড়িবাঁধ দ্রুত মেরামত করার পাশাপাশি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রধান কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর কথা জানালেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ময়মনসিংহ সার্কেলের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
ময়মনসিংহ সার্কেলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুহাম্মদ শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, ‘তীর প্রতিরক্ষার কাজ বেশ ব্যয়বহুল, প্রতি মিটারে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা ব্যয় হয়। তীর প্রতিরক্ষার বাঁধের স্টাডিতে আমরা দেখি এটি কতটা লাভজনক। আমরা কি-কি রক্ষা করতে পারবো। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে স্টাডিতে যেসব জায়গার জন্য পরামর্শ দেওয়া হবে সেখানে আমরা প্রতিরক্ষার কাজ করে থাকি।’
ধোবউড়ার নিতাই নদীর তীরে ১৮ কিলোমিটার এবং হালুয়াঘাটের বোরাঘাট, মেনাং ও শাওয়াল নদীর পাশে মোট ৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে।
কয়েকদিন আগেই পানিতে টইটুম্বুর ছিল ধোবাউড়ার সীমান্তবর্তী এই নেতাই নদী। পাহাড়ি ঢলের তোরে হঠাৎ বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত করে দুই কূল। কিন্তু এখন একেবারেই শান্ত, প্রায় পানি শূন্য। পাহাড়ি ঢলে হঠাৎ ভয়ংকর ওঠা এই নদীর কবল থেকে সীমান্তবর্তী জনপদ রক্ষায় দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে এখনই।