প্রায় দুই দশক আগে রাজনৈতিক সংঘাতের যে ঘটনা দেশের রাজনীতির ইতিহাসের বাক বদল করে দিয়েছিলো, আজ সেই দিন। রাজনৈতিক সহিংসতার এমন হৃদয়হীন ঘটনারও আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানোর আয়োজন এই প্রথম, কারণ এই ঘটনার পরে এত বড় পরিসরে আয়োজনের সুযোগ মেলেনি নানা বাস্তবতায়।
বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর ঢাকার মহানগরের দক্ষিণ শাখা এর আয়োজক, যেখানে আমন্ত্রণ পেয়েছেন ২০০৬ এর ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কর্মীদের হাতে নিহত শিবিরকর্মী হাফেজ গোলাম কিবরিয়ার বাবাও। তিনি এখন জামায়াত ইসলামীর স্তরভিত্তিক কর্মী কাঠামোর সর্বোচ্চ মর্যাদার একজন সদস্য। এবং বস্তুত ২০০৬ এর ২৮ অক্টোবরের সংঘাতে সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছিলো জামায়াত ইসলামী এবং তাদের সমর্থিত ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা।
প্রতিবাদ সভা নাম দেয়া হলেও, প্রায় দুই দশক আগের নির্মম রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের এই স্মরণসভা পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা রাজনৈতিক দলগুলোর মিলনমেলায় পরিণত হয়। জামায়াতের ডাকে আসা বিভিন্ন দলের নেতারা, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।
গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ফারুক হাসান বলেন, ‘বিগত তিনটি নির্বাচনে এই আওয়ামী লীগকে যারা বৈধতা দিয়েছে সেই আওয়ামী লীগের দোসরদের বিচার চাই।’
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কখনো এইটা মনে করবেন না যারা ফ্যাসিবাদের নতুনরূপে আবির্ভূত হতে চাচ্ছেন যে ছাত্ররা সুযোগ করে দিবে।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক কমিটির মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এই সুযোগকে সবার কাজে লাগাতে হবে।
জামায়াতের এই আয়োজনের অতিথি সাড়িতে দেখা যায় বিএনপির দুই শীর্ষ নেতাকেও। তাদের বক্তব্য বিবৃতিতেও ছিল জামায়াত নেতাদের সঙ্গে জেল জীবনের নানা স্মৃতি।
এখানে বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম যে কোন মূল্যে ঐক্য ধরে রাখার কথা বলেন। ইঙ্গিত দেন, নির্বাচিত হলে ক্ষমতা ভাগাভাগির কথা।
মির্জা আব্বাসের বক্তব্যে উষ্মা ছিল, সংস্কারের নানা দাবি নিয়ে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচার হওয়া জামায়াত নেতাদের প্রতি অন্যায় হয়েছে, মন্তব্য ছিল তাদের বক্তব্যে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র কখনো পাশাপাশি চলতে পারে না।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ আবার ফিরে না আসতে পারে সেই চেষ্টাটা আমাদের থাকতে হবে।’
জামায়াতের আমীর সবার শেষে বক্তব্য রেখেছেন এই অনুষ্ঠানে। আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন ইস্যুতে কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত জাতির উপর জেদ উঠাতে গিয়ে নিরীহ মানুষগুলো মেরে ট্রাকে উঠিয়ে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে লাশগুলো ছাই করে দেয়া হয়েছে।’
এই আলোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারেরও সমালোচনা করেছেন বিএনপি, জামায়াতসহ আমন্ত্রিত রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। তাদের অভিযোগ, পুলিশ, প্রশাসনসহ বিভিন্ন খাতে যারা আগের সসহযোগী ছিলেন তারা এখনও আছেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টিও গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত মন্তব্য করেন তারা।