দেশে এখন
0

পোড়া মরদেহকে নিজের সন্তান মনে করে দাফন, পরে জানলেন বেঁচে আছে ছেলে

পোড়া মরদেহকে নিজের সন্তান মনে করে দাফন করেছিল পরিবার। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে যেন দিশেহারা বাবা-মা। কিছুদিন পর জানতে পারেন তাদের ছেলে বেঁচে আছে। মাথায় গুলি নিয়ে পাঞ্জা লড়ছে মৃত্যুর সঙ্গে। তবে, শেষ পর্যন্ত মৃত্যুকে এড়িয়ে যেতে পারলেও বেশিরভাগ স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে ছেলেটি। শ্রমিক দম্পতি সন্তান ফিরে পেলেও কষ্টের সীমা নেই।

ঘটনা গেল ৫ আগস্ট দুপুরের। সাভারের আশুলিয়ায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যায় মাদ্রাসা পড়ুয়া রিফাত হোসেন। তবে বিকেল গড়িয়ে রাত পেরোলেও রিফাতের খোঁজ নেই। অনেক খোঁজাখুঁজির পর বাইপাইলে পুলিশের গাড়িতে পুড়ে যাওয়া পাঁচ মরদেহের একটিকে নিজেদের ছেলে বলে চিহ্নিত করে পরিবার। তার দাফন করা হয় বগুড়ার গাবতলীতে। কিন্তু ১১ আগস্ট ফেসবুকে সেই পরিবার জানতে পারে রিফাত জীবিত, সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে।

মাথায় লাগা গুলি বের করতে পারছিল না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর কাকরাইলের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে ৩ সেপ্টেম্বর অস্ত্রোপচার করে রিফাতের মাথার ভেতরে থাকা গুলিটি বের করা হয়। দুঃখের বিষয়, চিকিৎসা শেষে ১৩ সেপ্টেম্বর বাড়ি ফিরলেও রিফাত চিনতে পারছে না কাউকেই। গুলিতে সে হারিয়েছে তার স্মৃতি, মনে করতে পারছে না নিজের নামও।

পরিবারের একজন বলেন, ‘পুলিশের গাড়িতে পুড়ে যাওয়া পাঁচ মরদেহের একটিকে নিজেদের ছেলে মনে করে রিফাতের বাবা মা চিহ্নিত করে। রিফাতের মতোই দেখতে ছিল। পরে তাকে দাফন করা হয়। কিন্তু ১১ আগস্ট ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি রিফাত বেঁচে আছে।’

রিফাতের এক বন্ধু বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে আন্দোলনে গিয়েছিলাম এখন রিফাত আমাদেরই চিনে না।’

ছেলের সেবাযত্ন করতে গিয়ে বাবাকে বাদ দিতে হয়েছে দিনমজুরি, আর মায়ের ছাড়তে হয়েছে গার্মেন্টসের চাকরি। আয় রোজগার না থাকা ও কোনো সহায়তা না পাওয়ায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছে পরিবারটি।

রিফাতের বাবা বলেন, ‘আশুলিয়া থানার সামনে যাও গাড়ির মধ্যে পাঁচটা লাশ আছে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলছে। রিফাতের মতোই দেখতে ছিল। পরে ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি রিফাত বেঁচে আছে।’

অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছে স্থানীয়রা। সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে এই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

ইএ