দেশে এখন
0

নদী খনন ও পানি ধরে রাখা ছাড়া রংপুরে বন্যা নিয়ন্ত্রণের উপায় নেই: নদী গবেষক

রংপুর অঞ্চলে ওয়াটার রিজার্ভার নয় বরং নদী খনন ও সেচ খালে পানি ধরে রাখা ছাড়া বন্যা ও ভাঙন নিয়ন্ত্রণের কোন উপায় নেই বলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিশেষজ্ঞরা। তিস্তায় একটি রিজার্ভার বা জলাধার নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও ভৌগোলিক কারণে সেটা সম্ভব নয় বলে মত দিয়েছেন গবেষকরা। নদী ব্যবস্থাপনা, সেচ খাল খনন ও মেরামতসহ ৯টি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড যার ব্যয় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। এগুলো সম্পন্ন হলে সুফল মিলবে দাবি তাদের। তবে নদী গবেষকরা বলছেন যতদিন তিস্তা, ব্রক্ষ্মপুত্র বা যমুনার মতো নদী খনন না হবে ততদিন বন্যা সমস্যা দূর হবে না। আর প্রকৃত ব্যবস্থাপনার জন্য সব বিভাগকে সাথে নিয়ে কাজ করার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের।

সাজানো-গোছানো স্বপ্ন তছনছ করে ঘটি-বাটি সবই কেড়ে নেয় বানের ঢেউ। কখনো কখনো উত্তাল তরঙ্গের কাছে নতি স্বীকার করে মানুষ। ভিটে-মাটি হারিয়ে দীর্ঘ হয় সর্বহারা মানুষের তালিকা।

বন্যার জল ভাটিতে নামলে আবারো মিলিয়ে যায়, নদী, খাল দখল ভরাটের প্রতিবাদ। নদ-নদী বিধৌত উত্তরের জনপদের ভাজে ভাজে পোড়খাওয়া মানুষের বুকে রেখে যায় দগদগে ক্ষত ।

এ পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে বছর পর বছর ধরে গবেষণা চলছে এখনো। তবে নদী তীর সংরক্ষণ করে শহরগুলোকে রক্ষা করা গেলেও রেহাই পাচ্ছেনা নীচু এলাকার বাসিন্দারা। এদিকে বন্যা-ভাঙন ঠেকাতে ছোট ছোট নদীগুলো খননের উদ্যোগ নিলেও তিস্তা, যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের মতো বড় নদনদীগুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে নেই তেমন কোন উদ্যোগ।

ভরা বর্ষায় এক থেকে দেড় লাখ কিউসেক পানি প্রবাহিত হয় তিস্তায়। বন্যা নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারেজের উজানে একটি কৃত্রিম জলাধার নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

কিন্তু সমীক্ষায় দেখা গেছে উজান থেকে যে পরিমাণ পলি আসে তাতে প্রতি বছরই ভরে যাবে এই জলাধার বা রিজার্ভার। এতে খরচও বাড়বে বহুগুণ।

তাই তিস্তার পানি ভরা মৌসুমে বাইপাস করে শাখা নদী বা খালে নেয়া সম্ভব হলে, পানির প্রবাহ যেমন নিয়ন্ত্রণ হবে, অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে এখান থেকে সেচের পানিও পাবে কৃষক। ভাটির জনপদেও কাটবে বন্যার শঙ্কা।

তবে, তিস্তা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকার পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণের আওতায় ছোট ছোট রেগুলেটর বানিয়ে সেখানে ছোট আকারের রিজার্ভার তৈরীর কাজ চলছে। যার মাধ্যমে শুকনো মৌসুমেও পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

তবে আপাতত বর্ষা মৌসুমে যখন বৃষ্টি কম হবে তখন যেন কৃষক সেচ সুবিধা পায় এনিয়েও কাজ চলছে। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু এলাকায় সুফল পেতে শুরু করেছেন কৃষকরা, দাবি সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর।

এই মুহূর্তে রংপুর বিভাগে ৯টি প্রকল্প চলমান রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের চারটিই কুড়িগ্রাম জেলায়। এছাড়া গাইবান্ধা, দিনাজপুর, রংপুর, ঠাকুরগাঁওয়ে একটি করে এবং তিস্তা সেচ প্রকল্প। এর মধ্যে দুটি প্রকল্প এ বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা।

নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং ভাঙন নিয়ন্ত্রণের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। কমপক্ষে ১০০ বছরের পরিকল্পনা করতে পারলেই কেবল নদীর পানির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের তরুণ শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে আসছেন বন্যা নদী ভাঙন নিয়ে। শুধু তিনিই নয়, তার শিক্ষার্থীদেরও পড়াশুনার অংশ এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে। তাই উত্তরের নদী বিধৌত এলাকা নিয়ে কাজ করার সময় তাদের সাথে নেয়ার আহ্বান।

এএইচ

আরও পড়ুন:
এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর
No Article Found!