ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের এই খেলার মাঠে গত বুধবার অনুষ্ঠিত হয় ফুটবল টুর্নামেন্ট। তখনই খেলা দেখতে মাঠের পাশে দাঁড়ান এক ভবঘুরে যুবক তোফাজ্জল হোসেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘রাত ৮টার দিকে এক অচেনা মানুষকে দেখে হলের পোলাপান। পরে দেখে ছেলেটি হলের না। পরে ভাবে ছেলেটি মোবাইল চুরি করতে আসছে কিনা। পরে তাকে মেইন বিল্ডিংয়ের গেস্টরুমে নিয়ে আসা হয়।’
গণপিটুনি থেকে বাঁচাতে একদল শিক্ষার্থী তোফাজ্জলকে মুসলিম হক হলের অতিথি কক্ষে নিয়ে আসলে সেখানেও চলে বেধড়ক মারধর। একপর্যায়ে রাতের খাবার খাওয়াতে ক্যান্টিনে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে খাবার শেষে এক্সটেনশন হলের অতিথি কক্ষে নিয়ে আরেক দফা মারধর করা হয়। তবে এই ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
চোর সন্দেহে শিক্ষার্থী কর্তৃক তেফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে বিক্ষোভ করেন আরেকদল শিক্ষার্থী। নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি তোলেন তারা।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত মব জাস্টিসের প্রতিবাদ জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক লুৎফর রহমান বলেন, ‘ছাত্রলীগ করলেই তাকে প্রকাশ্যে মারা যাবে না। দেশে আইন আছে, দেশে বিচার ব্যবস্থা আছে সেটিকে যথাযথভাবে মেনেই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা যাবো। যদি কেউ মনে করেন ছাত্রলীগ করলেই তাকে মারা যাবে এটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কখোনোই সমর্থন করেনা। কারণ দেশে যদি এই মব জাস্টিসই ঘটে তাহলে এই অভুথান ব্যহত হবে।’
গণপিটুনিতে নিহতের ঘটনায় ৭ সদস্যদের তদন্ত কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বৃহস্পতিবার দিনভর শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন তারা। এদিকে ক্যাম্পাস প্রশাসন বাদি হয়ে শাহবাগ থানায় অজ্ঞাতনামা মামলা হয়েছে।
একইদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতাশামীম আহমেদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মহুয়া মঞ্চ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক ঘুরে নতুন প্রশাসনিকভবনে গিয়ে শেষ হয়।
এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের দৃষান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দিয়েছেন।.
এ ঘটনাকে দুঃখজনক মন্তব্য করে আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়ার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, 'আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ শুধু যারা দোষী তাদেরই নাম দেন, অন্য কারো নাম দিয়েন না কারণ এতে তদন্ত করতে সময় লাগে। আর যাতে নিদোর্ষ মানুষকে হেনস্থা হতে না হয়। আমি ডিবিকেও নির্দেশনা দিয়েছি, তাদের পরিচয় তারা দিবে তারপর ধরবে।'
যেকোনো ধরণের মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন অন্তবর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা।