কাশফুলের মুগ্ধতা ছড়ানো রূপসী বাংলা। ছবি: এখন টিভি
এই যে জলাশয়, জেলের মাছ ধরা, হাঁসের সাঁতার আর নৌকোয় মাঝির পারাপার… তারই পাশে ধবধবে সাদা বিস্তীর্ণ এক জমিন… এসবই যে জীবনানন্দের কবিতার মতোই মুগ্ধতা ছড়ানো আমাদের রূপসী বাংলা।
"কাশফুলে দুলে ওঠে নদীর দু'পাড়/ রূপসীর শাড়ি যেন তৈরি রূপার।" ঢাকার অদূরের এই সারিঘাট মনে করিয়ে দেয়, কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের এই ছড়াও।
আকাশের নীল সবচেয়ে সুন্দর এই শরতেই। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা সাদা তুলোর মতো উড়তে থাকতে, আর তারই নিচে সাদা কাশফুল যখন বাতাসে দুলতে থাকে; তখন মনে হয় কোনো শ্বেত বসনা একঝাঁক শিল্পী নৃত্য করছে।
দর্শনার্থীদের মধ্যে একজন জানান, আমার শরৎকালটা খুবই ভালো লাগে। কারণ শরৎতের আকাশটা খুবই ভালো থাকে।
বন্ধু-বান্ধবরা যখনই ছুটি পায় তখনই ঘুরতে যায়। সেজন্য আজকে ভাবলাম একটু কাশফুলের মধ্যেই হারিয়ে যায় বলেও জানান একজন।
"হাওয়ায় হাওয়ায় দোলে ওই কাশ ফুল/ উড়ে যায় আচল যে পড়ে এলো চুল।"- এই শরৎ আর কাশফুল কখনো নারীর শাড়ি পরার উপলক্ষ হয়ে ওঠে। তার কেশকালো চুল এই সাদা কাশের মাঝে আরও লাবণ্য ছড়ায়।
দর্শনার্থীদের মধ্যে আরো একজন জানান, কাশফুলে মেয়েদের শাড়িপরা একটা সৌখিন ব্যাপার। এজন্য ছোট বোন সবাইকে নিয়ে আসছি শরৎতের আকাশ কখানোর জন্য।
এই শরতে কখনো আকাশ মেঘলা হয়, বৃষ্টি ঝরে অবিরত। এসব উপেক্ষা করেও কেউ কেউ প্রিয়জনকে নিয়ে কাশফুলের ভালোবাসা মাখিয়ে নেয় গায়ে।
রাজধানীর ও এর আশপাশের অনেক জায়গাতেও ফোটে কাশফুল। তবে নগর সভ্যতাকে বিকশিত করতে গিয়ে যেন এমন প্রকৃতি কখনো ধ্বংসের দিকে না যায়, সেজন্য আকুতি এই কবির।
কবি ইরাজ আহমেদ বলেন, 'কাশফুলকে হয়তেো শান্তির প্রতীক বলা হয় না। কিন্তু কশফুল দেখে হয়তো মনে শান্তি অনুভূতি হয়। আমরা প্রতিদিন এই জীবনের সংঘাতে সবাই ক্ষত বিক্ষত হয়। এই কাশফুল কিন্তু আমাদের অন্য ভাবনার ভিতরে একটা মানুষিক প্রশান্তির মধ্যে নিয়ে যেতে পারে।'
নদীর ধার, জলাভূমি, চরাঞ্চল, শুকনো রুক্ষ এলাকা, পাহাড় কিংবা গ্রামের কোনো উঁচু জায়গায় কাশের ঝাড় বেড়ে ওঠে।
পরিবেশ ও সামাজিক সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ মৃত্যুঞ্জয় রায় বলেন, 'বন্যা হোক, খরা হোক যেকোনো পরিস্থিতিতে গাছটা মরে যেতে পারে কিন্তু এগুলোর শিকড় মাটিতে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। যখন আবহাওয়া গরম হয়ে যায় তখন কিন্তু জলজ বিভিন্ন প্রাণী কাশফুলের মধ্যে আশ্রয় নেয়। তারা ছায়া খুঁজে।'
নদী ভাঙন রোধসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই কাশফুলের ভূমিকা অসামান্য।