খোয়াই নদী। বছরের বেশিরভাগ সময় থাকে শান্ত। তবে, প্রতি বর্ষায় স্রোতহীন এই নদীর রূদ্ররুপে আতঙ্কে থাকেন হবিগঞ্জবাসী।
উজানে ভারি বৃষ্টি হলেই ঢলের জলে ভয়ংকর হয়ে ওঠে খোয়াই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড়েছে এর তীব্রতা। সবশেষ আগস্ট মাসে এই নদীর পানি ছাড়িয়ে যায় বিপৎসীমার ২৭৭ সেন্টিমিটার। যা কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর আধামিটার পানি বাড়লেই তলিয়ে যেত হবিগঞ্জ শহর।
তবে নদীর কোথাও নেই শক্তিশালী বাঁধ। আবার প্রতিনিয়ত বালুবাহী ট্রাক্টর চলাচলের কারণে বিভিন্ন অংশ হয়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ। স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঁধের সংস্কারে চলে নানা অনিয়ম।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন জানান, ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে বাঁধের মধ্যে যে বালুর বস্তা এগুলো ঠিকমতো ফালানো হয় নাই। আমাদের কাজ সম্পূর্ণভাবে না করে অর্ধেক কাজ করে চলে যায়। এইজন্য আমরা এলাকাবাসী একটু বিপদের মধ্যে আছি বলেও অভিযোগ করেন এক স্থানীয় বাসিন্দা।
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, খোয়াই নদীর তলদেশ শহর থেকে অন্তত ১৫ ফুট উঁচুতে। এছাড়া ড্রেজিং না করায় নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে কমেছে পানির ধারণ ক্ষমতা। এ অবস্থায় অপরিকল্পিতভাবে মাটি-বালু উত্তোলনের ফলে পরিবর্তন হচ্ছে নদীর গতিপথ।
বাপা ও খোয়াই রিভার ওয়াটার কিপার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘খোয়াই নদীটা বিজ্ঞানসম্মতভাবে দ্রুততার সাথে খনন করা দরকার। পাশাপাশি অনিয়ন্ত্রিতভাবে যে বালু মাটি উত্তোলন করা হয় এবং ভারি যন্ত্রপাতি যেগুলো ছিল সেগুলো নামানো যাবে না।’
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, ‘যখন বাঁধের উপর রাস্তা করা প্রয়োজন হবে তখন বাঁধের ডিজাইন লেভেলটা জানতে হবে। পরবর্তীতে বাঁধটা যাতে উঁচু লেভেলে থাকে।’
খনন ও শক্তিশালী বাঁধ নির্মাণসহ নদী রক্ষার দাবি দীর্ঘদিনের। তবে, সম্প্রতি খোয়াই নদী পরিদর্শনে এসে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা রুক ই আজম বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসন স্থানীয় জনগণের সাথে আলোচনা করে স্থায়ীভাবে এই সমস্যার কীভাবে সমাধান দিতে পারে সেই অনুযায়ী আমাদের পরামর্শ দিবে। সে অনুসারে এইখানে কাজগুলো করা হবে।’
হবিগঞ্জের বাল্লা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ভারতের আঠারমুড়া পাহাড় থেকে উৎপত্তি হওয়া খোয়াই নদী। জেলার ৫টি উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কিশোরগঞ্জে মেঘনায় গিয়ে মিশেছে খোয়াই।