দেশে এখন
0

পাগলা মসজিদের দানের টাকা কমলো

৩ মাস ২৬ দিন পর আবারও খোলা হলো কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের সিন্দুক। এবার মসজিদের নয়টি দানবাক্স খুলে পাওয়া গেল ৭ কোটি ২২লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা। ৭ কোটির গন্ডি পেরোলেও ভাঙতে পারিনি আগের রেকর্ড। এর আগে গত ২০ এপ্রিল খোলা হয়েছিল তখন পাওয়া গিয়েছিল রেকর্ড পরিমাণ ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা।

আজ (শনিবার, ১৭ আগস্ট) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে প্রায় চার মাস পর খোলা হয় নয়টি সিন্দুক।

সকালে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিজহাবে রহমতের নেতৃত্বে খোলা হয় মসজিদের নয়টি সিন্দুক। টাকাগুলো ভরতে প্রয়োজন হয় ২৮টি বস্তা। পরে এগুলো মসজিদের দোতলায় নিয়ে গণনার কাজ শুরু হয়। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলে টাকা গোনার কাজ। এর আগে এপ্রিল মাসে খোলা হয়েছিল সিন্দুক। তখন পাওয়া যায় এ মসজিদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ৭ কোটি ৭৮লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা।

তবে এবার ভাঙ্গতে পারেনি সেই রেকর্ড। সবমিলিয়ে পাওয়া গেছে ৭ কোটি ২২লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা। এখানে দান করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়-এ বিশ্বাস থেকেই লোকজন দুহাতে দান করে এ মসজিদে। শুধু মুসলিম নয়, সব সম্প্রদায়ের লোকজন শ্রদ্ধা-ভক্তি পাগলা মসজিদে দান করে।

এর আগে যখন খোলা হয়েছিল তখন প্রায় ১৮ঘণ্টা সময় লেগেছিল গণনার কাজ শেষ করতে। ফলে এবার অতিরিক্ত আরও ১০০ শিক্ষার্থী বাড়ানো হয় এই কাজে। কমিটির লোকজন, ব্যাংক কর্মকর্তা ও ছাত্রসহ প্রায় সারে তিনশো লোক অংশ নেয় গণনার কাজে। দিন দিন এর সুনাম যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে দানের পরিমান। মসজিদে আসা লোকজনসহ স্থানীরা বলছেন যে পরিমাণ টাকা এখানে উঠে সেই তুলনায় নেয় উন্নয়ন।

প্রতিবারই এই দান সিন্দুকে মিলে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা, স্বর্ণালাংকার, বিদেশি মুদ্রা। এছাড়াও প্রতিদিন আছরের নামাজের পর গরু-ছাগল, হাস-মুরগিসহ নানান জিনিস বিক্রি করা হয় নিলামে। তবে মোট কত টাকা আছে তহবিলে কিংবা কোন খাতে কত খরচ হয় এ নিয়েও রয়েছে জনমনে উদ্বেগ। রয়েছে নানা প্রশ্ন। এর স্পস্ট উত্তরের আহ্বাব জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিশোরগঞ্জের সমন্নয়ক ইকরাম হেসেন বলেন, 'আমরা মসজিদ কমিটি ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্পষ্ট আহ্বান জানিয়েছি মসজিদের দানের টাকার সুস্পষ্ট হিসাব ও ব্যয় খাত জনসাধারণের সামনে তুলে ধরার জন্য।'

মসজিদের বিপুল অর্থ-সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ২৯সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। ওই কমিটির সিদ্ধান্তে দানের টাকা পয়সা মসজিদের উন্নয়নসহ বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ ও আর্তমানবতার সেবায় ব্যবহার করা হয়। তবে মোট কত টাকা রয়েছে এব্যাপারে স্পস্ট কোন উত্তর দিতে রাজি নন কতৃপক্ষ।

পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি  ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, মসজিদের দানের টাকা দিয়ে অর্থ মানবতা সেবায় ব্যয় করা হয়, শীঘ্রই একটি দৃষ্টিনন্দন বহু দল ইসলামিক কমপ্লেক্স করার পরিকল্পনা রয়েছে। দানের মোট কত টাকা রয়েছে ফান্ডে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ ব্যাপারে হিসেব করে বলতে হবে।

রুপালী ব্যাংক, কিশোরগঞ্জ শাখার এজিএম রফিকুল ইসলাম এর কাছে মোট টাকার পরিমাণ জানতে চাইলে বলেন, 'আমরা গ্রাহকের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করি। তাই মোট টাকার পরিমাণ জানানো সম্ভব না। তবে কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের লিখিত অনুরোধ প্রদান করে সে ক্ষেত্রে আমরা হিসাব দিতে পারব।'

বর্তমানে কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ জমির ওপর মসজিদটি গড়ে উঠলেও বর্তমানে মসজিদের ব্যাপ্তি অনেক বেড়েছে। এ মসজিদের পরিধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে এর খ্যাতিও।

tech

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর