গেল ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ নগরীর মিন্টু কলেজ এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমর্থক ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়। গুলিতে নিহত হন স্নাতক পড়ুয়া ২৪ বছর বয়সী রেদোয়ান হোসেন সাগর।
সাগরের মা বলেন, ‘ও বড় হলেও বাচ্চার মতো ছিল। ছোট বেলায় ও বেশ চঞ্চল ছিল। বড় হওয়ার পর অনেক শান্ত হয়ে গেছে।’
নিহত এই তরুণের বাবা বলেন, ‘ওর মা আট বছরের বেশি সময় ধরে ক্যান্সারে ভুগছে। নতুন ঘর করার পর আমি ভেবেছিলাম হয়ত তাকে ঘরে আনতে পারব না। কিন্তু ওর মার পরিবর্তে যে আমার ছেলে চলে যাবে এটা আসলে কখনোই আমার কল্পনাতে ছিল না।’
একমাত্র ছেলেটা কোথাও নেই, কেবল আছে ছেলের ঘরে পড়ে থাকা জার্সিটা। পাগল প্রায় মা মমতাজ বেগম এই জার্সিতেই খুঁজে ফিরছেন ছেলেকে।
হৃদয়ে শূন্যতার যে গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে তা কীভাবে কাটিয়ে উঠবেন এই মা? নির্বাক পিতা আব্দুল মতিনের চোখেও আর জল ধরছে না। ভাইকে হারিয়ে দুনিয়া হারিয়েছে ছোট বোনটিও।
গেল ১৮ জুলাই বিকেলে রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দিলে গুলিবিদ্ধ হন শেখ শাহরিয়ার বিন মতিন সুহার্দ।
ডান চোখের পাশ দিয়ে গুলি ঢুকে তার মস্তিষ্ক ছেদ করে বুলেট। ছেলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি উপেক্ষা করেই ঢাকা মেডিকেল কলেজে পৌঁছেও তাকে জীবিত ফেরাতে পারেনি বাবা-মা। পরিবার জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া খালাতো ভাইয়ের সাথে ওই দিন আন্দোলনে যোগ দেয় সে।
সুহার্দের বাবা বলেন, ‘আমার ছেলে যে এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন করেছে, তার প্রাণ দিয়েছে এর বিনিময়ে হলেও আমি চাই যে দুর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হোক।’
প্রতিটি হত্যাই দুঃখজনক। দ্রুত বিচারের দাবি সচেতন মহলের।
জেলার এক সমাজকর্মী আলী ইউসুফ বলেন, ‘এ পর্যন্ত যে প্রাণহানি বা রক্তপাত হয়েছে এটি আমাদের দেশবাসী প্রত্যাশা করেনি। যখন ছাত্রদের রক্ত মাটিতে পড়ে যায় তখন সে রক্ত থেকে যে আন্দোলন শুরু হয় তা দমানো যায়না।’
গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি, ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত বলেন, ‘যেসব শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে বা শহীদ হয়েছে প্রতিটি ঘটনার আমরা আলাদা তদন্ত এবং বিচার চাই।’