দেশে এখন
0

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের স্থাপনা ও মন্দিরে হামলার বড় অংশই গুজব

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বেশ কিছু স্থাপনা ও মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটলেও বড় অংশই গুজব। এছাড়াও শিক্ষার্থী-নানা পেশার মানুষেরা এখনও দিয়ে যাচ্ছেন মন্দিরের নিরাপত্তার জন্য পাহারা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, যতদিন না আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে ততদিন তারা পাহারা দিয়ে যাবেন। অন্যদিকে পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা বলছেন, সত্য ঘটনার বাইরেও আছে গুজব। তবে সরকারকেই গুজব প্রতিরোধে নিতে হবে ব্যবস্থা।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পরাজয় ঘটলে গত ৫ আগস্ট তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। এসময় বিচ্ছিন্নভাবে ঘটে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের মতো ঘটনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসে মন্দিরে হামলার ঘটনা। যার কিছু অংশ সত্য হলেও অধিকাংশই দেখা যায় গুজব ও অসত্য।

নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এখানে অধিকাংশ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাস। এলাকাটিতে অন্তত ১০টির বেশি মন্দির আছে। সবচেয়ে বড় লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দিরের পুরোহিতের সঙ্গে কথা হয়। জানান, এখানে কোন ধরনের হামলা হয়নি, তবে সতর্কতার জন্য তারা পাহারা দিয়েছেন।

পুরোহিত বলেন, ‘আমাদের তো নিরাপত্তা প্রয়োজন। আমরা ভালো আছি, কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।’

অন্যদিকে এলাকাবাসি বলছেন, মন্দিরে কোন হামলা হয়নি। বরং শিক্ষার্থীরা এসে মন্দির পাহারা দিয়েছেন। এক এলাকাবাসী বলেন, আমাদের কোনো ক্ষতি হয় নি।’

পাশেই রামসিতা, লোকনাথ বাবা, গোরনিতাই, শনি মন্দিরসহ আছে বেদান্ত আশ্রম। এসব মন্দিরে প্রতিদিন কয়েকশ' মানুষের আসা যাওয়া। তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হিন্দু-মুসলিম কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মন্দির পাহারা দিয়েছেন।

মন্দিরে কোন ধরনের হামলার শঙ্কা নেই বলে জানান নারায়ণগঞ্জের লোকনাথ মন্দিরের সভাপতি প্রদীপ সরকার। তিনি বলেন, ‘৫ তারিখ বিকেলে ইসলামি ঐক্য পরিষদের লোকরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আসেন। তারা বিকেল ৪ টার দিকে আসে রাত ১০টা পর্যন্ত ছিল। এরপর রাত আনুমানিক সোয়া ১টার দিকে ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী আসে। ওরা এসে সবার সাথে মহড়া করে গেছেন।’

অন্যদিকে কেরানীগঞ্জের মন্দির ঘুরে দেখা যায় এখানেও হয়নি কোন হামলার ঘটনা। সনাতন ধর্মের ভক্তরা বলেন, এখানে হামলার কোন ঘটনা ঘটেনি। শিক্ষার্থী ও সনাতন ধর্মের মানুষেরা মন্দির পাহারা দিলেও হামলার শঙ্কা ছিলো না।

শিক্ষার্থীরা যারা মন্দির পাহারা দিচ্ছেন তাদের ভাষ্য, মন্দির ও সনাতন ধর্মের মানুষদের নিরাপত্তায় তারা কাজ করছেন। পাশাপাশি কেউ যেন গুজব ছড়াতে না পারে সেজন্য অনলাইনে সক্রিয় রয়েছে শিক্ষার্থীরা।

সুযোগ নিয়ে কেউ যেন সমাজে অস্থিরতা তৈরি করতে না পারে তাই আলেম সমাজ মন্দির পাহারায় নিয়োজিত হয়েছেন বলে জানান। শিক্ষক-ছাত্ররা মিলে তাই আশপাশের মন্দির পাহারায় নেমেছেন।

বাস্তব নির্যাতনের বাইরেও গুজব আছে, তবে যা ঘটেছে তার যেন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া গুজব প্রতিরোধে সরকারের তরফ থেকে যেন ব্যবস্থা নেয়া হয় তার জন্য আবেদন করেন এই নেতারা।

মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সহসভাপতি শ্যামল কুমার রায় বলেন, ‘আমরা যে ঘটনাগুলোর বিষয়ে জেনেছি, শুনেছি বা কমিটির মাধ্যমে জেনেছি, সেখানে বাস্তব ঘটনাগুলোই সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হচ্ছে। যতগুলো ঘটনা হয়েছে সেগুলোর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে যেন ব্যবস্থা করা হয়।’

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব কুমার দে বলেন, ‘গুজব তো সবসময়ের জন্যই খারাপ। সারা পৃথিবীতে এ গুজব করে অনেক বড় ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাবই বেশি।’

tech