দেশে এখন
0

নির্বিচারে রাসেল'স ভাইপার নিধনে ক্ষতির মুখে কৃষি অর্থনীতি

রাসেল'স ভাইপারের খোঁজে দল বেধে হানা দেয়া হচ্ছে সাপের বাসস্থানগুলোতে। ফলে প্রভাব পড়ছে পরিবেশে। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিটি প্রাণিই প্রকৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নির্বিচারে সাপ নিধনে বাস্তুতন্ত্রে ও কৃষি অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সাপ ধরা, বহন করা ও মারা হলে জেল জরিমানার যে বিধান রয়েছে তা প্রয়োগের তাগিদ দেন বিশেষজ্ঞরা।

রাসেল'স ভাইপারের আতঙ্ক গ্রাম ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে শহরেও। যে সাপ দেয়ালে উঠতে পারে না সে সাপের আতঙ্ক উঁচু ভবনের অনেক বাসিন্দাদের মনেও।

রাসেল'স ভাইপার সাধারণত নদীর এক কিলোমিটারের ভেতরে বসবাস করে। তবে অনেকে গুজব ছড়াচ্ছে এটি চলে এসেছে নগরে। গুজবের প্রভাবে রাসেল'স ভাইপার মারছেন অনেকে। আবার অনেকেই ঘটা করে দিচ্ছেন পুরস্কারের ঘোষণা।

স্ন্যাক রেস্কিউ টিম বাংলাদেশের সিনিয়র রেস্কিউয়ার সা'দ আহমাদ অপু বলেন, 'আমরা যদি রাসেল'স ভাইপারের ইংরেজি নামের সাথে পরিচিত না হয়ে বাংলা নামের সাথে পরিচিত হতাম তাহলে এই ভয়ভীতিটা ছড়াতো না। এ বছরের চেয়ে ২০১৫ ও ২০১৬ সালের দিকে এই সাপের বেশি কামড় খেয়েছে মানুষ। রাসেল'স ভাইপার বেড়ে গেছে এই কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভুল।'

এই প্রাণি পরিবেশের খাদ্য শৃঙ্খলে ভারসাম্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। বন্যপ্রাণী ধরা বহন ও মারা যে দণ্ডণীয় অপরাধ এ যেন ভুলতে বসেছে সবাই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফিরোজ জামান বলেন, 'আইনে স্পষ্টভাবে বলা আছে যেকোনো ধরনের বন্যপ্রাণী ধরা ও মারা সম্পূর্ণ দণ্ডনীয় অপরাধ। এতে ৬ মাস থেকে ১ বছরের জেল হতে পারে, সাথে ৫০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে।'

রাসেল'স ভাইপার নিয়ে দশটিরও বেশি গুজব প্রচলিত রয়েছে। এর সবগুলোই ভয়ের জন্ম দেয় অথচ এর কোনো ভিত্তি নেই। সোশ্যাল মিডিয়া ছড়িয়ে পড়া গুঞ্জনে ভীত অনেকে।

ড. ফিরোজ জামান আরও বলেন, 'অনেকেই বলছেন যে সাপ মেরে নিয়ে যেতে হবে। এ কথা কিন্তু ঠিক নয়। এর কারণ হচ্ছে ভেনমাস সাপ কামড় দিলে ২টি দাগ থাকে।'

২০১৩ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ২৩৫ জনকে রাসেলস ভাইপার দংশনের রোগী রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে মারা গেছে ৬৯ জন। ২০২৩ সালের সরকারি তথ্যমতে, বাংলাদেশে বছরে সাড়ে ৭ হাজার মানুষ সাপের দংশনে মারা যায়। এখন পর্যন্ত আনুমানিক ১০০ জন রাসেল'স ভাইপারের দংশনে মারা গেছে। তাহলে সাড়ে ৭ হাজারের মধ্যে ১০০ জন যা শতাংশের হিসাবে দাঁড়ায় মাত্র ১.৩৩ শতাংশ। তবে কেনো এতো আতংক?

ড. ফিরোজ জামান বলেন, 'বাংলাদেশে ২৮ ধরনের বিষধর সাপ আছে। এখন এই সাপ নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে বলে মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। বেশিরভাগই কৃষককে কামড় দিয়েছে। এর কারণ হলো তারা মাঠে কাজ করেন, খড়কুটো নাড়াচারা করে। এর গায়ের সাথে হাত বা পা লাগলে তারপর সাপ কামড় দেয়।'

নানা জায়গায় রাসেল'স ভাইপার সন্দেহে মারা হচ্ছে সাপ। যার বেশিরভাগই বিষহীন ও কৃষির জন্য উপকারী। আবার কেউ কেউ ফেইসবুক পেজ ও গ্রুপে আগের ছবি এবং ভারতের ছবি দিয়ে পোস্ট করে ছড়াচ্ছে আতঙ্ক।

ভাইরাল হওয়া বেশিরভাগ ভিডিওটিতে নেই রাসেল'স ভাইপার, এটি অজগর। এমন নানা ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়ানো হচ্ছে ভয়। অন্য আট-দশটা সাপের মতই এই সাপ। তাই সোশ্যাল মিডিয়ার গুজবে কান দিয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

প্রাণীবিদ ড. ফিরোজ জামান বলেন, 'ঢাকা শহরে এই সাপ আসছে এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা। একেবারে প্রপাগান্ডা। এর থেকে সতর্ক থাকতে হবে।'

বর্তমানে প্রতি বছর ৩০ শতাংশ জমির ফসল নষ্ট করে ইঁদুর। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত সাপ নিধন বাড়াবে ইঁদুরের উৎপাত। ক্ষতির মুখে পড়বে কৃষক ও কৃষি অর্থনীতি।

কৃষি গবেষক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন,'অনেক সময় ইঁদুর তাড়ানোর জন্য কীটনাশক ব্যবহার করি। কিন্তু সাপ তো ইঁদুর বিনাশ করে।'

বাংলাদেশে রাসেলস ভাইপারের চেয়েও বিষধর সাপ রয়েছে আরও কয়েকটি। এছাড়া বিশ্বের সেরা ৩০টি বিষধর সাপের তালিকাতেও এটি নেই। তাই আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

এসএস