স্বাস্থ্য
দেশে এখন
0

বিনা নোটিশেই বাড়ছে দাম, আদালতের নির্দেশের পরও নিরুপায় ওষুধ প্রশাসন

দু-চার মাস পরপর ওষুধের দাম বাড়ানো এখন যেন নিয়মিত বিষয়। বিনা নোটিশেই প্রতিনিয়ত বাড়ছে দাম, বাড়ছে ক্রেতাদের দীর্ঘশ্বাস। কিন্তু ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে হাইকোর্টের নির্দেশের পরও কার্যকর কিছু করতে পারছে না ওষুধ প্রশাসন। যার জন্য সব ধরনের ওষুধের দাম যৌক্তিকভাবে নির্ধারণে এই তদারকি সংস্থাকে সক্ষম করে তোলার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।

বাঁচতে হলে যাদের নিয়মিত ওষুধ খেতে হয় তাদের এখন হাঁসফাঁস অবস্থা। গেল তিন মাসে বেড়েছে অনেক ওষুধের দাম। এই তালিকায় আছে গ্যাস্ট্রিক, হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস রোগীর ইনসুলিন ও অ্যান্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ধরনের জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। এমনও কিছু ওষুধ আছে যার দাম গত দুই মাসে বেড়েছে তিন দফা। সব মিলিয়ে চলতি বছরে শতাধিক ওষুধের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। রাজধানীর বড় পাইকারি ওষুধের বাজার মিটফোর্ড ও শাহবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার দোকান ঘুরে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

বিক্রেতাদের একজন বলেন, 'কার্ডিয়াক ও ডায়াবেটিস ওষুধের দাম বেড়েছে। ট্যাবলেট প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে গিয়েছে।'

আরেকজন বলেন, 'হঠাৎ করেই দাম বাড়িয়ে দিয়েছে কোনো আলোচনা না করেই এমন হচ্ছে।'

দফায় দফায় ওষুধের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ওষুধ কেনার সামর্থ্যও হারিয়ে ফেলছেন।

ক্রেতাদের একজন বলেন, 'ওষুধের দাম কম হলেও নিতে হবে বেশি হলেও নিতে হবে। আমরা জনগণ কোম্পানি ও দোকানদারদের কাছে জিম্মি আমাদের কিছু করার নেই।'

আরেকজন বলেন, 'ভাত দুই বেলা না খেলে আমাদের কিছু হবে না তবে ওষুধ না খেলে জীবনের ঝুঁকি আছে। এখন দাম বাড়লেও তা আমাদের নিতে হবে।'

দোকানিরা বলছেন, প্রতি মাসেই কোনো না কোনো ওষুধের দাম বাড়ায় কোম্পানি। এতে বেশি বিপদে নিয়মিত ক্রেতারা। বাড়তি দাম দিতে গিয়ে তাই প্রতিদিনকার দরকষাকষি মাঝেমাঝেই রূপ নিচ্ছে বাক বিতণ্ডায়।

বিক্রেতাদের আরেকজন বলেন, 'গত তিস মাসে সব ওষুধে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ দাম বেড়েছে।'

এমন অবস্থায়, দাম নিয়ন্ত্রণে কী করছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর? নিয়ন্ত্রক এই সংস্থাটি বলছে, মাত্র ১১৭টি ওষুধের দাম ব্যতীত নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাখা নেই তাদের হাতে। বাকি কয়েক হাজার ওষুধের দাম বাড়া কমা চলে কোম্পানির মর্জিতে। যদিও, শৃঙ্খলা ফেরাতে বছর বছর পাস হয় নতুন আইন। এছাড়া দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টের নির্দেশও আছে কর্তৃপক্ষের প্রতি। এ নিয়ে শিগগিরই ওষুধ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনার কথা জানালো ওষুধ প্রশাসন।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন বলেন, 'আদালতে নির্দেশনা অনুযায়ী ওষুধ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।'

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে আরও আন্তরিক হতে হবে সরকারকে। বিবেচনায় রাখতে হবে মানুষের ক্রয় সক্ষমতা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ বলেন, 'ওষুধের দামের যে বৃদ্ধি তা যৌক্তিক পর্যায়ে হতে হবে। দাম বাড়ার ফলে মানুষ নিম্নমানের ওষুধের দিকে ঝুঁকবে।'

যেন ওষুধ কোম্পানির স্বেচ্ছাচারিতার কাছে জিম্মি জনগণ, এমনকি ওষুধ প্রশাসনও। এক বছরে একই ওষুধের দাম কয়েকবার বাড়লেও এ নিয়ে যেন মাথাব্যথা নেই স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট কোনো বিভাগেরই। ওষুধ প্রশাসনকে সব ধরনের ওষুধের দাম যৌক্তিকভাবে নির্ধারণের ক্ষেত্রে সক্ষম করা না গেলে ওষুধের দামের উর্ধ্বগতির বলি হতে থাকবে সাধারণ মানুষ, এমনটাই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ইএ