আবহমান বাংলার মেঠোপথ ধরে বয়াতি-বাউলদের আনাগোণায় একসময় মুখরিত হতো প্রান্তিক জনপদ। পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আসর জমাতো বয়াতিরা। যাদের গানে উঠে আসত দেশ ও মাটির সুর। তবে জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন বয়াতি-বাউলদের আগলে রাখতে পারছে না। জীবন-জীবিকার তাগিদে অনেকেই যুক্ত হচ্ছেন নতুন পেশায়। প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে পেশা পরিবর্তনের কথা ভাবছেন কামার ও বেদে সম্প্রদায়ের মানুষও।
একজন বায়াতি শিল্পী বলেন, 'আজ থেকে ১০ বছর আগে আমাদের এ বরগুনা জেলায় আজাই হাজার থেকে ৩ হাজার শিল্পী ছিল। সেখানে এখন ৭০ থেকে ৮০ জন আছে।এখন কোথাও আসরই বসানো যায় না গরমে। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে যায় সবাই।'
বিভিন্ন সময় ঘূর্ণিঝড়ের হানা, কৃষিজমিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, জলোচ্ছ্বাসের কারণে প্রতি বছরই প্লাবিত হচ্ছে বরগুনার নিম্নাঞ্চল। আর ভাঙনের কবলে পড়ে বসতবাড়ি ও কৃষিজমি হারাচ্ছেন প্রান্তিক মানুষ। এছাড়া পাথরঘাটায় কমেছে মৎস্য আহরণ। যাতে গত সাড়ে চার বছরে পেশার পরিবর্তন করেছেন উপকূলের অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। এখন টেলিভিশনের অনুসন্ধান তথ্য বলছে, নতুন করে প্রতি ১০০ কৃষকের মধ্যে ২০ জন ও ১০ জন জেলের মধ্যে ৩ জন যুক্ত হতে চান নতুন পেশায়।
একজন জেলে বলেন, 'প্রতি বছরই বন্যা হয়। বর্তমানে আমরা খুব অসহায়। আবার গরমের জন্য অনেকে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। নদী ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে ঘরের কাছাকাছি চলে আসছে একেবারে।'
জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ প্রভাব ফেলছে অর্থনীতিতে। তাই পরিবেশ বিপর্যয় রোধে পদক্ষেপ নেয়া তাগিদ পরিবেশবিদদের। এদিকে, পরিবেশ বিপর্যয় রোধ ও প্রান্তিক মানুষদের বসবাস নিরাপদ রাখার কথা বলছেন, জেলা প্রশাসক।
বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সিভিল এন্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের চিফ ইন্সট্রাক্টর মঈন উদ্দিন আহম্মদ বলেন, 'বেদে এবং উপকূলীয় লোকদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এজন্য তারা অন্য পেশায় আসতে বাধ্য হয়েছে। সেজন্য এদিকে সরকারের সজাগ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।'
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম বলেন, 'এখানে যেন সরকারিভাবে আমরা তাদের মেইনস্ট্রিমে রাখতে পারি এবং তারা যেন বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষার আওতায় তাদের জীবিকা চালিয়ে যেতে পারে সে বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকি। এ এলাকায় উপজাতিতের জন্য সরকার বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে থাকে।'
ঘূর্ণিঝড় রিমালে বরগুনা জেলায় কৃষিতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭৫ কোটি টাকায়।