দেশে এখন
0

ঘূর্ণিঝড় মৌসুমে দুশ্চিন্তায় উপকূলবাসী

ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুম এলেই উপকূলীয় এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধের আশপাশের বাসিন্দারা দুশ্চিন্তায় পড়েন। বরিশাল বিভাগে উপকূলীয় বাঁধের ৩২টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এর মধ্যে ৮টি পয়েন্ট বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। আগেভাগেই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামত না হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে বলে মনে করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা।

প্রতিবছরই বঙ্গোপসাগরে একাধিক নিম্নচাপ তৈরি হয়। কখনও কখনও তা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। এতে ঘটে প্রাণহানি, আর ফসল ও সম্পদ নষ্ট হয়। তাই ঘূর্ণিঝড়ের খবর শুনলেই আতঙ্কিত উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধের আশপাশের বাসিন্দারা হয়ে পড়েন।

ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষায় উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। যাতে ঝড়ের সময় উপকূলীয় এলাকায় পানি ঢুকতে বাধা পায়। তবে ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা ও আম্পানের আঘাতে বরিশাল বিভাগের বেড়িবাঁধের ৭৯টি পোল্ডারের মধ্যে ২৮ কিলোমিটারের ৩২টি পয়েন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ৬টির কাজ চলমান রয়েছে। তবে বাকি ২৬টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় আতঙ্কে স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয়রা বলেন, ‘যখনই আমরা ঘূর্ণিঝড়ের খবর শুনি তখনই আমরা আতঙ্কিত হই। ভয় লাগে, কখন কী হয়। আমরা কোথায় আর কী করবো?’

তবে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতির অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা যায় উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের অনীহা। ঝড়ের আগে সতর্কতায় মাইকিং করা হলেও বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চান না স্থানীয়রা।

বরিশাল সিপিপির ‍উপ-পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন মিয়া বলেন, ‘যেসব এলাকার মানুষ সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকদের কথায় গুরুত্ব দিয়েছে ওই এলাকায় ক্ষতি অনেক কম হয়েছে। যেখানে সাইক্লোন সেন্টার আছে সেখানে ক্ষতি কম হয়েছে। সবমিলিয়ে মানুষ যেখানে সচেতন সেখানেই ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে।’

উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় বরিশাল অঞ্চলের নদী অন্য যেকোন এলাকার তুলনায় বড়। ফলে ঘূর্ণিঝড়ের সময় জলোচ্ছ্বাস হলে পানির উচ্চতা বেড়ে যায়।

বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হান্নান বলেন, ‘এই বেড়িবাঁধগুলো বেশিরভাগ মাটির। বাঁধগুলো প্রতিবছরই আমরা মেরামত করি। এতে করে বাঁধগুলো আর ঝুঁকিপূর্ণ থাকে না।’

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, সাধারণত মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সাগরে সবচেয়ে বেশি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। তবে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামত শেষ না হওয়ায় এবার ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে।

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ে বরিশাল বিভাগের বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থান ভেঙে যায়। সে সময় সাগরের নোনা পানি কয়েক মাস ফসলের মাঠে ছিল। যার প্রভাব পড়ে ফসল উৎপাদনে।

পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম বলেন, ‘জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলকে রক্ষার জন্য ১৫ ফুট উচ্চতার বাঁধ দিচ্ছি। এছাড়া আমাদের আরও ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। আশা করছি, এবার আর সেরকম হবে না।’

বরিশাল বিভাগের বেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত পোল্ডারগুলোর মধ্যে পটুয়াখালীতে ১০টি, কলাপাড়ায় ৪টি, বরগুনায় ৭টি এবং ভোলায় ৩টি রয়েছে। এর মধ্যে পটুয়াখালীর ৩টি, কলাপাড়ার ১টি এবং বরগুনার ৪টি অংশ অতি ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।