দেশে এখন
0

মার্চ-এপ্রিলের রেশ থাকতেই আবারও মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা

দেশের ৫ অভয়াশ্রমে ২ মাসের নিষেধাজ্ঞার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কবলে উপকূলের জেলেরা। ২০ মে থেকে সামুদ্রিক জলসীমায় শুরু এই নিষেধাজ্ঞা। এতে জেলেদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। এমন অবস্থায় সহজ শর্তে ঋণ, পূর্নবাসনের পাশাপাশি প্রতিবেশি দেশের জেলেদের দৌরাত্ম্য ঠেকানোর দাবি তাদের।

উপকূলীয় অঞ্চলের ১৯ জেলার জেলেপল্লির বেশিরভাগ মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে মাছ শিকারের ওপর। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মধ্যেও মাছের সন্ধানে জেলেদের বছরের বড় একটি সময় কাটে সাগরে। জালে কাঙ্ক্ষিত মাছ ধরা পড়লে ঠোঁটে ফোটে হাসি। তবে মৎস্য প্রজনন বাড়াতে নিষেধাজ্ঞার সময় কপালে পড়ে চিন্তার ভাঁজ। সংসারের ঘাঁনি টানতে বাড়ে ঋণের বোঝা।

একজন জেলে বলেন, 'আমার ৫০টি ট্রলার দাদনে ছিল। বর্তমানে ৫টি আছে। বাকি সব বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মানুষের থেকে যে ঋণ নিয়েছি তা শোধ করতে পারিনি। সাগরে মাছ নেই বললেই চলে।'

ইলিশের প্রজনন বাড়াতে দেশের ৫টি অভয়াশ্রমে গেলো ৩০ এপ্রিল মধ্যরাতে শেষ হয় দু'মাসের নিষেধাজ্ঞা। এরপর সাগরের পাশাপাশি নদীতে জাল ফেলে জেলেরা। তবে আশানুরূপ রূপালি ইলিশের দেখা না মেলায় বিপাকে পড়েছে মৎস্যজীবীরা। লোকসানের দায় শোধের আগেই ২০ মে থেকে নতুন করে শুরু হচ্ছে সাগরে মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। নানা অনিশ্চয়তার মাঝে এরইমধ্যে নৌকা ও ট্রলার নিয়ে তীরে ভিড়তে শুরু করেছেন জেলেরা।

একজন জেলে বলেন, 'জাল গুছিয়ে নিয়ে আমরা চলে যাচ্ছি। এই ৬৫ দিন আমরা সাগরে যাব না। এমনিতে সাগরে মাছ নেই। গেল বারে মাছ পাইনি।'

মৎস্য বিভাগের পরিসংখ্যান বলছে, বছরে ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৩ দফায় ১৪৭ দিনই নদী ও সাগরে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকে। এ সময় সময়সীমার ওপর ভিত্তি করে নিবন্ধিত প্রত্যেক জেলে পরিবারকে ২৫ থেকে ৮৬ কেজি করে চাল দেয় সরকার। তবে, নিষেধাজ্ঞার সময় নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয় এই সুবিধার বাইরে থাকা হাজারও জেলে পরিবারের।

এমন অবস্থায় নিষেধাজ্ঞার সময় কিছুটা কমানো, শর্তে ঋণ ও পূর্নবাসনের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশের জেলেদের দৌরাত্ম্য ঠেকানোর দাবি জানান মৎস্যজীবীরা।

ওয়ার্ল্ডফিস বাংলাদেশের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, 'তাদের বিকল্প জীবিকায় আনার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। যেন তারা এই অবরোধকালীন সময়ে যেভাবে কষ্টে দিন কাটে সেটা থেকে কাটিয়ে উঠতে পারে।'

পিরোজপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সহ-সভাপতি আজাদ রহমান কিসলু খলিফা বলেন, 'আমাদের এই ৬৫ দিন যদি কিছু কমিয়ে দিত তাহলে আমাদের ব্যবসায়ীরা এবং ট্রলার মালিকরা কিছুটা উপকৃত হতো।'

এদিকে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি নিয়মিত অভিযানের কথা জানান সংশ্লিষ্টরা।

পটুয়াখালী কলাপাড়ার মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, 'প্রচার-প্রচারণা, জেলেদের নিয়ে সচেতনতা নভা, মাইকিং সবকিছু সম্পন্ন করেছি। এই ৬৫ দিনের মধ্যে যদি কোনো জেলে এই আইন অমান্য করে সেক্ষেত্রে আমাদের অভিযানের ব্যবস্থা থাকবে।'

উপকূলীয় ১৯ জেলাসহ সারাদেশে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১৮ লাখের বেশি। এর বাইরেও কয়েক লাখ জেলে সরাসরি মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে।

এসএস