দেশে এখন
0

ইলিশের আকাল থাকলেও সরকারি হিসাবে উৎপাদনের রেকর্ড!

চাঁদপুরে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইলিশের আকাল থাকলেও সরকারি হিসাবে দেখানো হচ্ছে, উৎপাদনের রেকর্ড চিত্র। ভুল ঠিকানায় দেখানো হচ্ছে আহরণের পরিসংখ্যান। জেলায় গোমতী নদীর অস্তিত্ব না থাকলেও দেখানো হচ্ছে সেখান থেকে ইলিশ আহরণের পরিমাণ। পাশাপাশি উৎপাদনের যে হিসাব দেখিয়েছে মৎস্য বিভাগ- তা নিয়েও বিস্মিত ইলিশ গবেষকরা।

ইলিশের খ্যাতির কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে বেশ সমাদৃত চাঁদপুর। ভরা মৌসুমে পাইকারি মাছঘাটগুলোতে নিকট-দূরের ক্রেতায় জমে ভিড়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আকাশ ছোঁয়া দরের পাশাপাশি বাজারে মাছের সরবরাহ তুলনামূলক কম।

তবে, মৎস্য বিভাগের দেয়া পরিসংখ্যানে উৎপাদনের ফর্দ ফুলে ফেঁপে হচ্ছে দীর্ঘ। এমন অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছ কাজির গরু কি খালি কেতাবিই আছে? নাকি গোয়ালের চিত্র আসলেই ভিন্ন! বিষয়টি অনুসন্ধানে মাঠে নামে এখন টেলিভিশন।

জেলেদের একজন বলেন, ‘সারা বছর এই দুই তিন মাস নদীতে ইলিশ পাওয়া যায়।’ 

আরেকজন বলেন, ‘মাছ পাওয়া যায় অল্প পরিমাণে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় না।’

মেঘনার শাখা নদী ধনাগোদা। বয়ে গেছে চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলার ভেতর দিয়ে। শান্ত এই নদীতে সারা বছরই মেলে দেশি নানা মাছের দেখা। তবে, বর্ষায় পানি বাড়লে অন্যান্য মাছের সাথে দু'চারটে ইলিশও পান জেলেরা। 

অথচ ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে জেলা মৎস্য বিভাগ ধনাগোদা ও চাঁদপুরে অস্তিত্ববিহীন গোমতী নদী থেকে ইলিশের উৎপাদন দেখিয়েছে ৩৭৩.৫ টন। বিষয়টি খোদ জেলেদের কাছেই অনেকটা অস্বাভাবিক ঘটনা। একইভাবে বিস্মিত মৎস্য ব্যবসায়ী ও গবেষকরাও।

ব্যবসায়ীদের একজন বলেন, ‘বৈশাখ মাছ আসলে কিছু ছোট ইলিশ পাওয়া যায় কিন্তু বড় ইলিশ পাওয়া যায় না।’

আরেকজন বলেন, ‘আমরা ইলিশ হালি হিসেবে বিক্রি করি। মৎস্য কর্মকর্তারা জানতে আসে না কখনো আপনারা কতমণ মাছ বিক্রি করেছেন।’

ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান বলেন, ‘ধনাগোদা ও চাঁদপুরে অস্তিত্ববিহীন গোমতী নদী থেকে ইলিশের উৎপাদন আসলে সচরাচর হয় না। কিছু ঝাঁক হয়ত আসতে পারে।’

এমনিতেই দূষণসহ নানা কারণে জেলার নদীগুলোতে প্রতিবছর আশঙ্কাজনক হারে কমছে ইলিশের উৎপাদন। অথচ জেলায় রেকর্ড ৩৫ হাজার ১০৪ টন ইলিশের উৎপাদন দেখিয়েছে মৎস্য বিভাগ।

এর মধ্যে চাঁদপুর সদরে ১৮ হাজার ৯৭২.৭৫ টন, হাইমচরে ১০ হাজার ২৩৯ টন, মতলব উত্তরে ৫ হাজার ৫১৯.৫ টন ও মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ৩৭৩.৫ টন। তবে, পদ্মার ইলিশে মেলেনি লিখিত পরিসংখ্যান। লিপিবদ্ধ নেই পদ্মা নদী থেকে পাওয়া ইলিশের হিসাব।

আড়ৎদারদের দাবি, ইলিশ উৎপাদনের তথ্য নিতে কখনো কোনো আড়তে যায়নি মৎস্য বিভাগ। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে ইলিশ উৎপাদনে দেয়া এই তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা কি?

আড়ৎদারদের একজন বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে তারা কোনো তথ্য নেই না। তারা কীভাবে তথ্য দিচ্ছে তারাই বলতে পারবে। আমাদের হিসেবে প্রতিবছরই ইলিশের পরিমাণ কমছে।’

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল বারী জমাদার বলেন, ‘আমাদের উপর একটা দায় আসছে যে ইলিশের উৎপাদন দিন দিন বাড়ছে তাহলে মাছের দাম কেন কমছে না। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে মাছের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই যে তারা বাড়তি উৎপাদন দেখাচ্ছে এতে তো সরকারের বুঝতে সমস্যা হচ্ছে  ইলিশের উৎপাদন কীভাবে বাড়াবে।’

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, ‘এই তথ্য কে হিসাব করেছে আমি জানি না। আর গোমতী নদী তো চাঁদপুরের কিছু না। গোমতী নদীর সোর্স কোথায় পেয়েছেন আপনি আমাকে দেখতে হবে।’

শুধু দেশে নয়, চাঁদপুরের ইলিশের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। পদ্মা-মেঘনায় ইলিশের প্রাচুর্য রক্ষায় প্রয়োজন গবেষণা ও সঠিক তথ্য নিরূপণ। ইলিশ সংকট মোকাবিলায় দরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ- এমনটাই দাবি জেলাবাসীর।

ইএ