দেশে এখন

তীব্র গরমে সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি, নগরবাসীর দুর্ভোগ

বর্ষার আগেই বাড়ে খোঁড়াখুঁড়ি, বাড়ে নগরবাসীর ভোগান্তি। এই গরমের কষ্টের মধ্যে যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই খোঁড়াখুঁড়ি। রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কে চলছে উন্নয়ন কাজ। কোথাও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক করতে সিটি করপোরেশন, কোথাও স্যুয়ারেজ লাইন ঠিক করতে ঢাকা ওয়াসা রাস্তা কাটছে। আবার কোথাও বিদ্যুতের লাইন ও ইন্টারনেট ক্যাবল মাটির নিচে নিতে রাস্তা কাটছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।

ঢাকার ব্যস্ততম ইত্তেফাক মোড় থেকে টিকাটুলি হয়ে সায়েদাবাদ হানিফ ফ্লাইওভার পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে মাটির নিচে পানি, বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট লাইন বসানো হচ্ছে। যে কারণে গেল এপ্রিল থেকে তীব্র তাপপ্রবাহের মাঝে এই সড়ক ব্যবহারকারীদের অসহনীয় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

রাস্তা সরু হয়ে যাওয়ায় সবসময়ই গুলিস্তান থেকে ছেড়ে আসা দক্ষিণাঞ্চলগামী গাড়িগুলো এই সড়কে আটকে থাকছে। প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে ধুলাবালিতে টিকাটুলি সড়কে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়ছে বলে জানান পথচারীরা।

এক পথচারী বলেন, ‘সড়কের কাজ মাসের পর মাস চলছেই। মানুষের যে ভোগান্তি হচ্ছে তা বলে বুঝানো যাবে না। আর এ সময় রাস্তা কাটাকাটি হলে মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়।’

এক রিকশাচালক বলেন, ‘রাস্তার কাজ হওয়ায় আমাদের রিকশা নিয়ে চলতে খুব কষ্ট হয়। পাঁচ মিনিটের পথে ৩০ মিনিট লেগে যায়।’

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কাজের জন্য বছরের বেশিরভাগ সময় সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে দুর্ভোগে পড়ছেন নগরবাসী। ধুলাবালির কারণে স্বাস্থ্যের জন্য বয়ে আনছে মারাত্মক ক্ষতি।

নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হাসান জাফর বলেন, ‘এই যে মানুষগুলো রাস্তায় চলাচল করছে। শিশু বাচ্চারাও সঙ্গে থাকে, তাদেরও সমস্যা হচ্ছে। যা ভবিষ্যতে বড় ধরনের শারীরিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।’

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সড়ক কাটাকাটি বা খোঁড়াখুঁড়িতে সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয়হীনতার কারণে দীর্ঘ যানজট আর হরহামেশা দুর্ঘটনা ঘটছে।

এক পথচারী বলেন, ‘এই সড়কে রিকশাতেও চলাচল করতে পারছি না। তীব্র গরমের মধ্যে হেঁটে যাওয়ার কারণে খুব কষ্ট হচ্ছে।’

তথ্য বলছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটির সড়ক খনন ও পুনঃনির্মাণ বিষয়ক ওয়ান স্টপ সেলের ৮০তম সভায় ১০টি অঞ্চলে প্রায় ২০টি সেবা সংস্থার ৪০টি কাজের অনুমতি দেয়া হয়। শুধু এপ্রিল মাসেই নগরের বিভিন্ন সড়কের ৯০টি পয়েন্টে খননের অনুমতি দেয়া হয়েছে। যেখানে ডিপিডিসির ১৬টি, ওয়াসার ১১টি, বাহন লিমিটেডের অপটিকাল ফাইবার স্থাপনের জন্য ৬টি, বাংলাদেশ রেলওয়ের ৩টি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ স্কাউট, তিতাস, শামীম আরা স্টিল ও রি-রোলিং মিলসের একটি করে কাজ রয়েছে।

সিটি কর্পোরেশন বলছে, সড়ক খননে সেবা সংস্থাগুলোর বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা দেয়ার নিয়ম থাকলেও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে তেমন সাড়া পাওয়া যায় না। তাই সমন্বয়হীনতা থেকে যায়। তবে অনিবার্য কিছু কাজ ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নীতিমালা মানা হচ্ছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্যই নির্দিষ্ট সময় বিবেচনা করেই কাজের অনুমতি দেয়া হয়। এক্ষেত্রে আমরা সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে কিছু শর্তও দিয়ে দেই। আর শর্তগুলো না মানলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে থাকি, আবার জরিমানাও করা হয়।

অন্যদিকে রাস্তা খননের কারণে তীব্র যানজট মোকাবিলায় হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশকে। বড় ধরনের যানজট মোকাবিলায় বিকল্প পথও ব্যবহার করা হয় বলে জানান ওয়ারী ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আশরাফ ইমাম।

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর