আজ (শুক্রবার, ১২ এপ্রিল) বিকেলে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দক্ষিণাঞ্চলের ঘুরমুখো মানুষের ভিড়। ঈদের দ্বিতীয় দিনেও যাত্রীদের চাপ রয়েছে নৌপথের সবচে বড় এই টার্মিনালে। গতকাল (বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল) ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার তেমন কোনো প্রভাব নেই। এমভি ফারহান-৬ ও তাশরিফ-৪ লঞ্চের ধাক্কাধাক্কিতে রশি ছিঁড়ে প্রাণ যায় ৫ জনের। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাঁচ আসামিকে নেয়া হয়েছে তিন দিনের রিমান্ডে। মামলার তদন্ত করবে সদরঘাট নৌ পুলিশ।
টার্মিনালে দেখা যায়, নোঙর করা লঞ্চগুলো সেই পুরাতন ও দুর্বল রশি দিয়ে বাঁধা। কয়েকটি রশিতে রয়েছে জোড়াতালি। লঞ্চ মালিকদের নেই বাড়তি কোনো সতর্কতা। বেশিরভাগ রশি পুরাতন।
লঞ্চে ব্যবহার করা রশি বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। তবে কোনো লঞ্চ মালিকই নতুন রশি কিনেন না। জাহাজে ব্যবহার করা রশি কিনে আনেন লঞ্চ মালিকরা। রশি পানিতে ভিজে গেলে দুর্ঘটনার শঙ্কা বেড়ে যায়। কথাগুলো বলছিলেন, ৫০ বছর ধরে লঞ্চে চাকরি করা নাসির হোসেন। তিনি বলেন, রশি ছিঁড়ে এ রকম দুর্ঘটনা কখনোই তিনি দেখেননি।
নাসির বলেন, 'লঞ্চ মালিকরা এগুলো ব্যবহার করা রশি কিনে নিয়ে আনে। চট্টগ্রাম থেকে ব্যবহার করা পুরাতন রশি নিয়ে আসে তারা। এহুলো একেকটা একেকরকম হয়ে থাকে। কোনটা শক্ত হয় আবার কোনটা নরম হয়ে যায়। এটি যত মোটা হবে তত ওজন বেশি হবে। রশি দড়িতে ভিজে গেলে নরম হয়ে যায়।'
লঞ্চের রশির পাশ দাঁড়িয়ে আজও পানি, সিগারেট বিক্রি করছে হকাররা। তাদের মধ্যে এ নিয়ে কোনো ভয় নেই। রশি ছিঁড়ে বিপদে হতে পারে সে ব্যাপারেও নেই কোন খেয়াল।
পাঁচজন নিহতের ঘটনায় কিছুটা ভীতি রয়েছে অনেক যাত্রীদের মধ্যে। অনেকেই লঞ্চ থেকে দূরে দাঁড়িয়ে কাঙ্ক্ষিত লঞ্চের অপেক্ষা করছেন।
একজন যাত্রী বলেন, 'একটা লঞ্চ আরেকটা লঞ্চকে যেভাবে ধাক্কা দেয় তাতে দুর্ঘটনা ঘটা স্বাভাবিক। কালকের ঘটনায় বয় পেয়েছি। রশি থেকে দুরে দাঁড়িয়ে আছি সেজন্য।'
দুর্ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, দুই লঞ্চের অবহেলা ও রেষারেষিতে রশি ছিঁড়েছে। তিন দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করার কথা জানান কমিটি প্রধান নৌ বন্দর ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন।
তিনি বলেন, 'আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে আজকে কাজ শুরু করেছি। প্রথম পর্যায়ে প্রত্যক্ষ্যদর্ষীদের কাছে থেকে ঘটনা শোনা হবে। ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের সাথে জড়িত সরকারি বিভিন্ন সংস্থা তাদেরও সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। এর ফলে দায়ীদের আমরা খুজেঁ বের করতে পারবো।'
লঞ্চে রশি ছিড়েঁ ছোটখাট দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতা এর আগেও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে রয়েছে। তবে এত বড় দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতার কথা কেউ বলতে পারছে না। এই রশির ব্যবহার নিয়ে কোনো নীতিমালা না থাকলেও একেকটি লঞ্চ তাদের ইচ্ছেমতো রশি ব্যবহার করেন। রশির সক্ষমতা নিয়ে তাদের কোনো যাচাই-বাছাই থাকে না। একেকটি রশি দীর্ঘদিন ব্যবহার করেন।
১০০ থেকে ২০০ কেজি ওজনের এই রশি ছিড়েঁ বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন যে কেউ। তবে তদন্ত কমিটি বলছেন, তারা এ ঘটনার তদন্ত শেষ করে লঞ্চগুলো কি ধরনের রশি ব্যবহার করতে পারবে তার একটি নীতিমালা তৈরির ব্যাপারে তারা সুপারিশ করবেন।