জল ও সড়ক, জয়ী হলো কে? সড়ক পথ গতি পেয়েছে, তাই ঈদে ঘরমুখো মানুষ ছুটছে সড়কে। লঞ্চ টার্মিনালের ঈদ আনন্দে তাই এখন ভাটা। যাত্রী ভাটার টার্মিনালে যে কজন ঘরমুখো মানুষ আসে তাদের টানতেই নৌ শ্রমিকদের হাঁকডাক শুরু হয়।
তাদের হাঁকডাকই বলে দেয় কতোটা যাত্রী সংকটে ভুগছে দেশের সবচেয়ে নিরাপদ ও আরামদায়ক পথ হিসেবে পরিচিত নদীপথ।
মুসলমানদের বৃহৎ উৎসব ঈদুল ফিতরের সপ্তাহখানেক আগে সদরঘাটের চিত্র অনেকটা হতাশার লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকদের জন্য। তারা বলছেন, মূলত পদ্মা সেতু চালুর পর নদীপথে যাত্রী ভাটা শুরু হয়।
লঞ্চ মালিকরা বলছেন, ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ৪৩টি নৌ রুটের মধ্যে গত ২ বছরে বন্ধ হয়ে গেছে ১০-১২টি। এছাড়া ১৫টিতে লঞ্চ চলাচল করে অনিয়মিতভাবে। তাদের দাবি ঈদ সবগুলো রুটেই লঞ্চ চালাতে তারা শতভাগ প্রস্তুত।
বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা নদী বন্দর কর্মকর্তা বলছেন, যাত্রীচাপ বিবেচনায় বিশেষ লঞ্চ সেবা দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এবারের ঈদে একদিনে ঢাকা থেকে সর্বোচ্চ ১২০ থেকে ১৩০ টি লঞ্চ ছেড়ে যেতে পারে।
এমকে শিপিং লাইনসের পরিচালক মাসুম খান বলেন, 'যেদিন গার্মেন্টস ছুটি হবে সেদিন একটা চাপ হবে। সেই চাপটা বেশি হবে ভোলা রুটে। তুলনামূলক ঢাকা-বরিশাল রুটে চাপ অনেকটা কম হবে।'
বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা নদী বন্দর নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা আলমগীর কবির বলেন, 'যাত্রীর চাপ অনুযায়ী লঞ্চ প্রস্তুত আছে। নৌ দুর্ঘটনার কোনো ধরনের আশংকা আমরা করি না। আমার মনে হয় না অতিরিক্ত যাত্রী কেউ বহন করবে। তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
যাত্রী ও লঞ্চ ব্যবস্থাপনায় তেমন কোন ঝুঁকি না থাকলেও এবারের ঈদ হবে ভরা বৈশাখী মৌসুমে। তাই নদীপথে কালবৈশাখী কিছুটা হলেও চোখ রাঙাচ্ছে এ পথের যাত্রীদের।
আবহাওয়া অফিস থেকে নদীতে তিন নম্বর সিগনাল দিলে কোন লঞ্চ ছাড়া হবে না। নদীতে চলা লঞ্চও তাৎক্ষণিক তীরে নোঙর করার নির্দেশনা দেয়া আছে বলে জানান বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা।
তিনি বলেন, 'আকাশের তাকালে যে কেউ বুঝতে পারবে ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে যাত্রা স্থগিতের জন্য আমরা মালিক পক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছি। আমরা আশা করছি ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ এবারের ঈদে যাতায়াত করবে।'
যাত্রীবাহী লঞ্চের পাশাপাশি ঈদে চাপ বাড়ে ফেরিঘাটেও। বিশেষ করে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে এবারের ঈদে গাড়ীর চাপ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিসি বলছে, এরই মধ্যে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটের ৫টি ঘাটে ২০টি ফেরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সংস্থাটি জানায়, ঈদে তাদের আওতাধীন দেশের বিভিন্ন রুটের ৭টি ফেরিঘাটে মোট ৪৬টি ফেরি চলাচলের জন্য প্রস্তুত আছে।
তবে ঈদে নদীপথের যাত্রা দুর্ঘটনামুক্ত রাখতে রাতে বাল্কহেড চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রাখতে নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডের কঠোর নজরদারি রাখতে হবে বলে মনে বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএ।