পাখির চোখে তাকালে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের শিববাড়ি পর্যন্ত দেখা মিলবে নতুন এক পথের। শিল্পনগরী গাজীপুরের বুক চিড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সমৃদ্ধি ও অগ্রযাত্রার অনন্য নিদর্শন দেশের প্রথম বাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প। নানা সংকটে বারবার সময় ও অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখলো প্রকল্পটি। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৯১ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজও চলছে দ্রুতগতিতে।
২০১২ সালে সরকারের এই মেগা প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছিল রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যানজটকবলিত গাজীপুর এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ২২ জেলার দ্রুত ও সহজ যোগাযোগের জন্য। তবে প্রকল্পের ধীরগতি এই পথের যাত্রী ও পরিবহন চালকদের দুর্ভোগের কারণ হয়ে ওঠে। প্রতিবছর ঈদযাত্রায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের জন্য প্রকল্পটি দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বিআরটি প্রকল্পের কাজ শুরুর পর কেটে গেছে ১২টি বছর। এই একযুগ গাজীপুরসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ঈদযাত্রায় যে দুর্ভোগ রুপ নেয় মহাদুর্ভোগে। তবে সম্প্রতি খুলে দেয়া হয়েছে বিআরটি প্রকল্পের সাড়ে ৪ কিলোমিটার এলিভেটেড অংশসহ ৭টি ফ্লাইওভার। কর্তৃপক্ষ বলছে, যার সুফল মিলবে এবারের ঈদযাত্রায়।
বিআরটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, 'রাস্তার কাজের অগ্রগতি ৯০ শতাংশের উপরে হয়ে গেছে। অর্থাৎ আমাদের যে কয়টি ফ্লাইওভার করার কথা ছিল, এবং নিচের এক গ্রেডের রাস্তা, তার কাজ শেষ হয়েছে। সাইনবোর্ড ফ্লাইওভার, ভোগড়া ফ্লাইওভার ও গাজীপুর চৌরাস্তা ফ্লাইওভার ব্যবহার করে স্বল্প সময়েই পৌঁছানো যাবে গন্তব্যে। ফ্লাইওভারের নিচের সড়কে কার্পেটিংয়ের কাজও প্রায় শেষ। যার সুফল পাচ্ছে এ পথে চলাচলকারীরা। এবার আর রাস্তায় জ্যাম হবে না।'
এবারের ঈদযাত্রায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ব্যবহারকারী যাত্রীরা রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের চৌরাস্তা পর্যন্ত ৭টি ফ্লাইওভার ও এলিভেটেড সড়কের সুবিধা পাবেন। ফ্লাইওভারের নিচে কাজের এ কার্পেটিংয়ের কাজও প্রায় শেষ।
একজন বাসচালক বলেন, 'এখানে ফ্লাইওভার হওয়াতে সুবিধা হয়েছে। উপর দিয়েও যাওয়া যায়, নিচে দিয়েও যাওয়া যায়। আগে তো তি থেকে চার ঘণ্টা লাগত। এখন এক থেকে দেড় ঘণ্টায় যেতে পারি।'
একজন যাত্রী বলেন, 'আাগের মতো জ্যাম নেই। এখন আমাদের সময় কম লাগে। আমরা আরামে যেতে পারি।'
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্যমতে, প্রতিদিন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী- চৌরাস্তা হয়ে যাতায়াত করে প্রায় ৬০ হাজার যানবাহন। ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপ বাড়ায় যানবাহনের সংখ্যাও বাড়ে দ্বিগুণ। তাই ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ট্র্যাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে থাকছে বিশেষ ব্যবস্থা।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, 'অবৈধ পার্কিং এবং ফুটপাত দখলমুক্ত রাখার জন্য আমরা বিশেষ দল করেছি। এছাড়া মোবাইল দল থাকবে। যেকোনো জায়গায় কোথাও জটলা হইলে, কোথাও ঝামেলা হইলে তারা সাথে সাথে ব্যবস্থা নিবে।'
বিআরটি প্রকল্প পুরোপুরি সম্পন্ন হলে যাতায়াতে বাঁচবে সময়। বাড়বে কর্মঘণ্টা। যা আর্থিক মূল্য যোগ করবে জাতীয় অর্থনীতিতে।