স্বাস্থ্য
দেশে এখন
0

কিডনি রোগের ব্যয় মেটাতে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকেই

শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক সব দিক থেকে বিপর্যস্ত কিডনি রোগীরা। দেশের প্রায় আড়াই কোটির একটি অংশের ডায়ালাইসিস ও কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন পড়লেও অর্থের অভাবে নাগাল পান না অনেকেই। সেবার আরও সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি ওষুধ, ডায়ালাইসিস ও প্রতিস্থাপন খরচ কমানোর আহ্বান রোগী ও চিকিৎসকদের।

৫৮ বছর বয়সে এসে কিডনি রোগের কবলে চিত্রসাংবাদিক আবু সালেহ আহমেদ। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য সমস্যা থাকায় প্রতিদিন ১৩ পদের ওষুধ খেতে হচ্ছে। সঙ্গে সপ্তাহে দু'বার ডায়ালাইসিসতো আছেই। একেকবার ডায়ালাইসিসেই খরচ ৩ হাজার টাকা। শারীরিক ধকলের সঙ্গে প্রতিমাসে ৫০ হাজার টাকার যোগান অর্থনৈতিকভাবেও নাস্তানাবুদ করেছে সালেহ আহমেদকে।

তিনি বলেন, 'আমার বড় কোনো ইনকাম নেই। কতদিন চিকিৎসা চালাতে পারবো তাও বলতে পারি না। সরকার থেকে কিছু ওষুধের দাম কম রাখলে মানুষের সুবিধা হয়।'

কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিসের খরচ কম হলেও ওষুধ থেকে রেহাই নেই রোগীদের। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া রোগীদেরও মাসে অন্তত ২৫ হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। চিকিৎসার প্রসারে ৩২ জেলা পর্যন্ত ডায়ালাইসিস সেবা ছড়িয়ে গেলেও অর্থনৈতিক মুক্তি নেই কারোই।

দেশব্যাপী প্রায় ২০০ সেন্টারে একদিনে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার রোগীর ডায়ালাইসিস নেবার রেকর্ড থাকলেও গড়ে ১০ হাজারের বেশি নিতে পারেন না। অথচ নিয়মিত ডায়ালাইসিস প্রয়োজন এমন রোগীর সংখ্যা ২০ হাজারের কাছাকাছি।

অন্যদিকে প্রতি মাসে ৫ হাজার মানুষের কিডনি প্রতিস্থাপনের চাহিদা থাকলেও সম্পন্ন হচ্ছে মাত্র ৩০০ এর কাছাকাছি। আইনি জটিলতায় অনেকটা বাধ্য হয়ে বহুগুণ খরচে দেশের বাইরে প্রতিস্থাপন করছেন অনেকেই। তবে যারা বিদেশ যেতে পারছেন না বা দেশেও প্রতিস্থাপনের খরচ যোগাতে পারছেন না তারা ধুকে ধুকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেফ্রোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের উচিত আগে দক্ষ নেফ্রোলজিস্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট রিলেটেড ট্রান্সপ্ল্যান্ট নেফ্রোলজিস্ট তৈরি করা। আমাদের ট্রান্সপ্ল্যান্ট ইউরোলজিস্টও তৈরি করতে হবে বলে জোড় দেন তিনি।

এদিকে প্রত্যেক কিডনি রোগীকে গড়ে ৭ থেকে ১৫ পদের ওষুধ খেতে হয় রোজ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় পলি ফার্মেসি। বাঁচার তাগিদে প্রয়োজন পড়লেও অতিরিক্ত ওষুধ উল্টো মৃত্যুঝুকিঁও বাড়াচ্ছে বলে মত ফার্মাসিস্টদের।

বিশ্বব্যাংকের ফার্মাসিস্ট ও সাবেক পরামর্শক ড. মো. আবু জাফর সাদেক বলেন, 'শতকরা ৮০ ভাগ রোগীর প্রেসক্রিপশনেই ৫টির বেশি ওষুধ থাকে। অনেকগুলো ওষুধ যখন কেউ খায় তখন তার সাইড ইফেক্ট থাকে, হসপিটালাইজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং আর্লি ডিটেক্ট করতে পারলে পলি ফার্মেসি প্রয়োজন নাও হতে পারে।'

তবে সঠিক জ্ঞানের মাধ্যমে কিডনি রোগীদের আরও কম ওষুধেও সুস্থ রাখা সম্ভব বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. কাজী শাহনুর আলম বলেন, 'অতিরিক্ত ওষুধ সেবনের প্রবণতা আছে আমাদের দেশে। এটাকে কমানোর জন্য আমাদের প্রেসক্রিপশনে অত্যন্ত জরুরি ওষুধগুলোতে প্রাধান্য দিতে হবে। পলি ফার্মেসিকে নিরুৎসাহিত করতে হবে।'

কিডনি রোগীদের আয়ুকাল বাড়াতে সব জেলায় ডায়ালাইসিস সেবা, বেশি সংখ্যায় প্রতিস্থাপন ও ইনস্যুরেন্স পলিসির মাধ্যমে অর্থনৈতিক বোঝা কমানোর জোর আহ্বান বিশেষজ্ঞদের।

এমএসআরএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর