আজ (রোববার, ২৪ নভেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেবিন ব্লকের ৬তলা গিয়ে বিরল যমজ জোড়া দেহ থেকে আলাদা হওয়া জোড়া শিশু নূহা ও নাবার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন এবং তাদের রিলিজ দেন। এ সময় সবার মুখে হাসি-খুশির ছাপ ফুটে উঠে।
কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার শিবরাম কাঁঠাল বাড়ি গ্রামের বাসিন্দা নাসরিন আক্তার ও আলমগীর হোসেন দম্পতির সন্তান নূহা ও নাবার শরীরের পেছন ও নিচের দিক থেকে যুক্ত ছিল। কনজয়েন্ট টুইন পিগোপেগাস নূহা ও নাবাকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করায় বিএসএমএমইউর প্রশাসন, চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
এসময় সেখানে উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম, পরিচালক (হাসপাতাল) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. রেজাউর রহমান, শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম জাহিদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নূহা ও নাবার চিকিৎসা বাবদ ৫০ লক্ষ টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। এ ব্যয়ের প্রায় ৩৬ লক্ষ টাকা বহন করেছে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। আর ১৫ লক্ষ টাকা পাওয়া গেছে অনুদান হিসেবে। অনুদানকারী তার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। তবে এই অনুদান পেতে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছেন সাংবাদিক তাওসিয়া তাজমিম ও দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক চৌধুরী খালেদ মাসুদ। সার্বিকভাবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই শিশু নূহা ও নাবার চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে।
পরিচালক (হাসপাতাল) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. রেজাউর রহমান জানিয়েছেন নূহা ও নাবাকে ডিসচার্জ দেয়া হলেও চিকিৎসার জন্য ফলোআপে থাকতে হবে এবং আরো অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
শিশু নূহা ও নাবার জন্ম হয়েছিল ২০২২ সালের ২১ মার্চ। বিএসএমএমইউতে তাদের ভর্তি করানো হয়েছিল ৪ এপ্রিল ২০২২ সালে। তারপর থেকে তারা এখানেই বেড়ে উঠেছে। শিশু নূহা ও নাবার চিকিৎসায় নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে নিউরোসার্জনগণ, শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম জাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে শিশু সার্জনগণ, অ্যানেস্থেশিওলজিস্ট গণসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞগণ, চিকিৎসক, নার্সরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা করেছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলেই জোড়া লাগানো দেহের যমজ শিশু নূহা ও নাবা আলাদা হওয়ার আনন্দ নিয়ে ২ বছর ৭ মাস ২০ দিন পর সুস্থ হয়ে মা বাবার সাথে বাড়ি ফিরেছে। বিএসএমএমইউতে এ পর্যন্ত ৩ জোড়া লাগানো শিশুদের আলাদা করা হয়েছে এবং আরো এক জোড়া শিশুকে আলাদার প্রস্তুতি চলছে।