সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে পরিবারের সবার সঙ্গে হাস্যজ্জ্বল অতিকুল্লাহ খান এখন সোমালিয়ান জলদস্যুর হাতে বন্দি। আদরের তিন সন্তান বারবার দেখছে বাবার সেই ছবি। গতকাল থেকে ঘুম নেই পরিবারের কারও চোখে। সবার মনে একটাই উৎকন্ঠা, জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে কবে তিনি দেশে ফিরবেন। স্ত্রী গর্ভবর্তী হওয়ায় সেই উৎকন্ঠা আরও বেড়েছে।
অতিকের মা শাহনুর বেগম বলেন, 'সারারাত কেউ ঘুমাতে পারে নাই। পরিবারে শুধু হাহাকার। আমরা আর সহ্য করতে পারছি না।'
একই অবস্থা ভারত মহাসাগরে জিম্মি হওয়া এম ভি আবদুল্লাহ জাহাজের ২৩ নাবিকের পরিবারে। স্বজনের খোঁজে তারা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানসহ নানা জায়গায় খোঁজখবর নিচ্ছেন। সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি নাবিকদের স্বজনরা বলছেন, সময় যত গড়াবে ফুরিয়ে যাবে জাহাজের খাবার ও প্রয়োজনীয় রসদ। তাই নাবিকদের সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেতে সরকার ও জাহাজের মালিক কতৃর্পক্ষ এস আর শিপিংকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি তাদের।
স্বজনরা বলেন, 'তারা সবশেষ বলেছে যে তাদের মোবাইলগুলো নিয়ে যাচ্ছে। এরপর আর তাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ নাই। ওরা বলেছে আমাদের উদ্ধার করতে তোমরা তাড়াতাড়ি যোগাযোগ করো।'
স্বজনদের দাবি, মুক্তিপণ না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে জলদস্যুরা। জাহাজে ২৪ দিনের খাবার মজুদ আছে, পানি শেষের পথে। জাহাজটি কয়লা বোঝাই থাকায় মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়ে আগুন লাগার শঙ্কায় শঙ্কিত তারা। এ অবস্থায় দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে যেকোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে দাবি তাদের।
গতকাল জাহাজ থেকে সাড়ে তিন মিনিটের একটি অডিও বার্তা পাঠান নাবিকরা। জানান, জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জলদস্যুরা ১৫-২০ মিনিট পর পর ফাঁকা গুলি করেছে। সবাইকে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আস্তানায়। মোবাইলও কেড়ে নেয়া হয়েছে।
জাহাজের চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান অডিও বার্তায় বলেন, 'তারা কারও গায়ে হাত তোলেনি, কিন্তু কিছু গোলাগুলি করেছে। জাহাজের এবং আমাদের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে সবাই ভয়ে আছি। তারা আমাদের ভয় দেখাচ্ছে।'
জাহাজের মালিকপক্ষ এসআর শিপিং কতৃর্পক্ষ বলছে, জলদস্যুরা নিজেদের সেইফ জোন তৈরি করার জন্য নানা ধরনের চাপ সৃষ্টি করে। এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নাই। এর আগেও ২০১০ সালে জলদস্যুদের কবলে পড়া এম ভি জাহান মনি ও ২৬ জন নাবিককে ১০০ দিন পর উদ্ধার করা হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবারও তারা নাবিকসহ জাহাজ উদ্ধারের কাজ শুরু করেছেন।
এসআর শিপিংয়ের মিডিয়া অ্যাডভাইজার মিজানুল ইসলাম বলেন, 'তারা সেইফ জোন তৈরি করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নিবো। এটা নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। এর আগেও আমরা জলদস্যুদের থেকে নাবিকদের মুক্ত করেছি।'