দেশে এখন
0

জলদস্যুরা যেভাবে জাহাজ দখলে নিয়েছে, জিম্মি চিফ অফিসারের অডিও বার্তা

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর প্রধান কর্মকর্তা (চিফ অফিসার) মো. আতিক উল্লাহ খান একটি অডিও বার্তা পাঠিয়েছেন তার পরিবারের কাছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর মুঠোফোনে তার স্ত্রীর কাছে অডিওটি তিনি পাঠান।

অডিও বার্তাটি সবার কাছে পৌঁছে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে মো. আতিক উল্লাহ খান বলেন, ‘আমি চিফ অফিসার বলছিলাম, আব্দুল্লাহ জাহাজ থেকে। আজকে(গতকাল) জাহাজের আনুমানিক সময় সকাল সাড়ে দশটার দিকে এবং জিএমটি ৭টা ৩০ মিনিটের দিকে একটা হাইস্প্রিডের স্পিডবোট আমাদের দিকে আসতেছিল। সাথে সাথে অ্যালার্ম দিয়েছিল। সবাই আমরা ব্রিজে গেলাম, সেখানে ক্যাপ্টেন স্যার এবং সেকেন্ড অফিসার স্যার ছিল। তখন আমরা জিগজ্যাগ কোর্স করলাম, ইউক্যাম্পটিতে ট্রাই করেছিলাম কিন্তু কল রিসিভ করেনি। এরপরে জলদস্যুগুলো চলে আসলো।’

তিনি বলেন, ‘ক্যাপ্টেন স্যার এবং সেকেন্ড অফিসার স্যারকে ধরলো এবং আমাদের সবাইকে ডাকলো। আমরা আসার পরে ওরা খুব গোলাগুলি করলো। আমরা একটু ভয় পেয়েছিলাম। সবাই ব্রিজে বসেছিল। এমনি কারো গায়ে হাত তুলেনি শুধু সেকেন্ড অফিসারকে হাত তুলেছে। পরে আরও কয়েকটা স্পিডবোটে করে কয়েকজন চলে আসলো। মেবি ১৫-২০ জন হবে। কিছুক্ষণ পর বড় ফিশিং বোট আসলো। ইরানিয়ান একটা ফিশিং বোট ছিলো, যেটা একমাস আগে ক্যাপচার করেছিল। এক মাস ধরে এই ফিশিং বোট নিয়ে ঘুরতেছিল কোনো জাহাজের জন্য, আনফরচুনেটলি আমাদের জাহাজ পেয়েছে। ওরা এখন ইরানিয়ান ফিশিং বোটকে রিলিজ করে দিবে কিন্তু ফুয়েল শেষ হয়ে যাওয়ায় আমাদের কাছ থেকে ডিজেল নিচ্ছে। তারপর ওরা জাহাজ স্টপ করালো। সেকেন্ড ও থার্ড ইঞ্জিনিয়ারের ইঞ্জিন রুমে গেল। গিয়ে জাহাজ সিস্টেমেটিক্যালি বন্ধ করেছে।’

জাহাজের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে মো. আতিক উল্লাহ খান অডিও বার্তায় বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে জাহাজের এখন পর্যন্ত কোনো কিছু হয়নি এবং আমাদেরও তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। সবাই একটু ভয়ে আছে। সবাই ভয় পাচ্ছে, ভয় দেখাচ্ছে।’

খাবার ও পানির প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের ২০-২৫ দিনের প্রভিশন (খাবার) আছে। ২০০ টন ফ্রেশ ওয়াটার আছে। আমরা অলরেডি বলছি, ফ্রেশ ওয়াটার সবাইকে সেফলি ব্যবহার করতে। আমাদের জাহাজে একটা সমস্যা হচ্ছে কোল কার্গো আছে ৫৫ হাজার মতো। এইটা একটু ডেন্জারাস কার্গো। ফায়ার হাইজার্ড আছে, মিথেনও রয়েছে। লাস্ট আমি অক্সিজেন লেবেল নিয়েছিলাম ৯-১০ শতাংশ ছিল। এইটা একটু রেগুলার মনিটর করতে হয়। লেবেল বেড়ে গেলে আমাদের আবার এক্সপার্টের পরামর্শ নিতে হবে। এইটা একটু ব্যবস্থা করেন স্যার কাইন্ডলি। আমাদের জন্য দোয়া করবেন স্যার। আমাদের পরিবারকে একটু দেখবেন স্যার। তাদেরকে একটু শান্তনা জানাবেন স্যার।’

প্রসঙ্গত, গতকাল বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টার দিকে জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাচ্ছিল। জলদস্যুদের কবলে পড়া চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের এই জাহাজটি পরিচালনা করছে গ্রুপটির সহযোগী সংস্থা এস আর শিপিং লিমিটেড।

জিম্মি জাহাজে মো. আতিক উল্লাহসহ ২৩ বাংলাদেশি নাবিক রয়েছেন। তারা জিম্মি হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে স্বজনদের। তাদের উদ্ধারের সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে।

আসু