রাজধানীর জিগাতলার রেস্তোরাঁ কাচ্চি ভাবী ভবনের নিচে তিনটি আবাসিক ভবনের মাঝে কিছু গ্যাস সিলিন্ডার রাখা হয়েছে। এগুলো দিয়ে রেস্তোরাঁর রান্না চলে। কোন কারণে এখানে দুর্ঘটনা ঘটলে ভবনটিসহ আশপাশের ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আর এতেই বুঝা যায় এখানকার অগ্নি নিরাপত্তার হাল!
ভবনটিতে একটি মাত্র সিঁড়ি দিয়ে ভোক্তাদের যাতায়াত করতে হয়। আর যেখানে রান্নার কাজ চলে সেখানে দেখা গেল বেশকিছু গ্যাস সিলিন্ডার। আরও ভয়ের বিষয়, এখানে রাখা আগুন নেভানোর সিলিন্ডারের মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় বছরখানেক আগে।
তাহলে ছোটখাটো আগুন লাগলেও এই মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার দিয়ে কিভাবে নেভানো যাবে? প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার বলেন, ‘এটা আমাদেরকে আবারও চেক করতে হবে। হয়তো বা কোনটা রয়ে গেছে। তবে অন্যগুলোর মেয়াদ আছে।’
অন্যদিকে আরও বেশকিছু রেস্তোরাঁয় গিয়ে দেখা গেল সরু সিঁড়ি দিয়ে ক্রেতাদের যাতায়াত করতে হয়, বের হওয়ার জরুরি পথ কিংবা আগুন নেভানোর সিলিন্ডার নেই। আবার কিছু রেস্তোরাঁয় বৈদ্যুতিক তার ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যেকোন সময় এখানে বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
মেয়াদোত্তীর্ন অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখা হয়েছে অগ্নিনিরাপত্তায়
রেস্তোরাঁর পাশাপাশি শপিংমলেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই। রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট। যেখানে ৬০০ এর বেশি দোকান থাকলেও নেই ফায়ার এক্সিট। যাতায়াতের গলি ও সিঁড়িতে বসানো হয়েছে দোকান। যত্রতত্র ঝুলে আছে বৈদ্যুতিক তার। দোকানিরা বলছেন, আগুন নির্বাপনের সামান্য কিছু সিলিন্ডার থাকলেও নেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা।
দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান নিজের পক্ষে সাফাই গেয়ে জানান, পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা আছে ভবনে। কিন্তু আগুন এখনও লাগেনি বলে গর্ব করেন তিনি। বলেন, ‘আমাদের এখানে কোনদিন সমস্যা হয়নি। প্রায় ৪০ লাখ টাকার ক্যাবল নতুন করে লাগিয়েছি। আমরা খুব সচেতন।’
অন্যদিকে এ এলাকার হকার্স মার্কেটে প্রায় ২৫০ দোকান থাকা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত ফায়ার সেফটির ব্যবস্থা নেই। সরু গলি দিয়ে যাতায়াত করতেই যেখানে ভোগান্তি, সেখানে দুর্ঘটনা ঘটলে মানুষজনের বের হওয়ার ব্যবস্থা নেই।
এ অবস্থায় ক্রেতা-বিক্রেতারা জানালেন শঙ্কার কথা। বলেন, ‘সবসময় একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। কখন ধ্বসে পড়ে তার ঠিক নেই। খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।’
রাজউকের এক হিসাব বলছে, ঢাকার দুই সিটিতে সাড়ে ৩ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ ভবন রয়েছে। কিন্তু অগ্নি নিরাপত্তা মেনে কতগুলো বাণিজ্যিক ভবন পরিচালিত হচ্ছে তা নিয়ে নির্দিষ্ট কোন হিসাব প্রতিষ্ঠানটির কাছে নেই।
সরু সিঁড়ি দিয়ে ক্রেতাদের যাতায়াত করতে হয় রেস্তোরাঁগুলোতে
ঢাকার ত্রুটিপূর্ণ ভবনগুলো খুঁজে বের করতে রাজউক কাজ করছে উল্লেখ করে দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিবুর রহমান বলেন, ‘খুব শীঘ্রই এসব ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, প্রায় প্রতিষ্ঠনে এমন অবহেলা আর স্বেচ্ছাচারিতা চলছে কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায়। তাই এ থেকে মুক্তি পেতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও কঠোর হওয়ার তাগিদ তাদের।
নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, ‘রানা প্লাজা ধ্বসের পর সরকার যেভাবে পুরো একটা শিল্পকে মাত্র আড়াই বছরে পরিবর্তন করে ফেলেছিল। একইভাবে আগামী ৬ মাসের মধ্যে সমস্ত ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।’
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সারা দেশে মোট ২৭ হাজার ৬২৪টি অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৭৯২ কোটি ৩৬ লাখ মূল্যের সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে আহত হয়েছেন ২৮১ জন ও নিহত হয়েছেন ১০২ জন। মোট দুর্ঘটনার মধ্যে রেস্তোরাঁয় ২৪৬টি ও শপিংমলে ৭৫৯টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।