এমন প্রাণঘাতী বিমান দুর্ঘটনা ১৬ বছরে আর দেখেনি যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে বাণিজ্যিক বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণহানির ঘটনা সচরাচর দেখা যায় না আরও আগে থেকেই। শেষবার ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিউইয়র্কে যাত্রীবাহী একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ যায় ৪৯ আরোহীর সবার। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অল্পের জন্য দুর্ঘটনা এড়ানোর প্রবণতা বেড়ে চলায় উদ্বেগ বাড়ছে নিরাপত্তা নিয়ে।
ওয়াশিংটনের পোটোম্যাক নদীতে স্থানীয় সময় বুধবার রাতের দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, অত্যন্ত নিখুঁতভাবে রোনাল্ড রিগ্যান বিমানবন্দরে অবতরণের পথে ছিল বিধ্বস্ত বিমানটি।
নজরদারি ক্যামেরায় ধরা পড়া ফুটেজেও স্পষ্ট, সংঘর্ষের আগে বেশ অনেকটা সময় ধরে যাত্রীবাহী বিমানটির দিকে সোজা উড়ে যাচ্ছিল হেলিকপ্টারটি।
রাতের পরিষ্কার আকাশে, দুর্ঘটনাকবলিত জ্বলজ্বলে আলোতে বিমানটি অস্তিত্ব জানান দেয়া সত্ত্বেও মার্কিন বিমান বাহিনীর অত্যাধুনিক ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারটি কেন নিচ থেকে বা উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে কিংবা ঘুরে গিয়ে সংঘর্ষ এড়ায়নি, সে প্রশ্নও ছুঁড়ে দিয়েছেন ট্রাম্প।
একজন বলেন, ‘আমি ঘুমানোর জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। তীব্র ‘ব্যাং ব্যাং’ আওয়াজটা যখন শুনি, তখন আমি কেবল শুয়েছি। খুব অস্বাভাবিক শব্দ, প্রতিদিন এমনটা শোনা যায় না। যুদ্ধক্ষেত্রে কিংবা অ্যাকশন সিনেমায় যেমনটা শুনি, তেমন শব্দে উঠে পড়ি। জানালা থেকে আকাশের দিকে তাকাই। ওই মুহূর্তে আমি শুধু ধোঁয়াই দেখছিলাম।’
মাঝ আকাশে দুর্ঘটনার সময় কানসাস থেকে উড়ে আসা বেসামরিক বিমানটিতে ৬৪ জন আরোহী এবং প্রশিক্ষণ উড্ডয়নে থাকা সামরিক হেলিকপ্টারটিতে তিনজন সেনা ছিলেন। নদী থেকে ৩৫০ মিটার উপরে সংঘর্ষের পর জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে রূপ নেয় বিমান ও হেলিকপ্টারটি।
বিমানের দু'টি তথ্য রেকর্ডার বা ব্ল্যাকবক্সের একটি নদীর তলদেশ থেকে উদ্ধার করেছে ডুবুরি দল। হেলিকপ্টার ক্রু যে খুব কাছেই বিমানটির অবস্থান সম্পর্কে জানতো, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ার এবং ব্ল্যাক হকের মধ্যকার বেতার যোগাযোগে এরই মধ্যে তা স্পষ্ট হয়েছে। যদিও বিমান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্ঘটনাকবলিত ব্ল্যাক হকের গুরুত্বপূর্ণ ট্র্যাকিং সিস্টেমটি বন্ধ ছিল।
অস্ট্রেলিয়ার বিমান বিশেষজ্ঞ জেফ্রি থমাস বলেন, ‘হেলিকপ্টারটির এটি প্রশিক্ষণ ফ্লাইট ছিল। আপাতদৃষ্টিতে এটির এডিএস-বি ট্র্যাকিং সিস্টেম বন্ধ ছিল। এটি এমন একটি সংকেত, যেটি এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে পাঠানো হয়েছিল বিমানটিকে শনাক্ত করার জন্য। টিসিএএস বা ট্রাফিক কলিশন অ্যাভয়েডেন্স সিস্টেম নামে আরেকটি সিস্টেমের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানও এডিএস-বি। সব বাণিজ্যিক ও সামরিক বিমানে টিসিএএস থাকে, যা সংঘর্ষের পথে থাকা বিমানগুলোকে সতর্ক করে। টিসিএএস কাজ করার জন্যেও এডিএস-বি অবশ্যই অন করা থাকতে হবে।’
প্রশিক্ষণ ফ্লাইট হলেও দুর্ঘটনার সময় হেলিকপ্টারটি অভিজ্ঞ হাতেই ছিল বলে দাবি করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে বেসামরিক প্রশাসনের পাশাপাশি কাজ শুরু করেছে প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনও।
তিনটি বাণিজ্যিক বিমানবন্দর এবং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটির অবস্থান মার্কিন রাজধানীতে। বলাই বাহুল্য, অঞ্চলটির আকাশসীমা বেশ ব্যস্ত। ওয়াশিংটনে নদীর একদম পাশেই রিগ্যান ন্যাশনাল এয়ারপোর্টের ব্যস্ত রানওয়ের নিরাপত্তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উদ্বেগ জানিয়ে আসছেন অনেক আগে থেকেই।