দেশে এখন
0

নদীকেন্দ্রিক পেশাজীবীদের ব্যস্ততা কমেছে

একসময় যেসব নদীকে ঘিরে নিয়ন্ত্রিত হতো অর্থনীতি ও যোগাযোগ, খুলনা অঞ্চলের সেসব নদী এখন মৃতপ্রায়। প্রাণ হারিয়ে খরস্রোতা নদী পরিণত হয়েছে মরুভূমিতে। কমেছে নদীকেন্দ্রীক পেশাজীবীদের কর্মব্যস্ততা।

জাল বুনে নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন অনেকেই। তবে পলি পড়ে নদী, খাল ভরাট হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা। মো. মিলন খাঁ নামের এক জেলে বলেন, 'এখন শহরের নোংরা পানি আসে, সব মাছ মরে যায়। আগে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা আয় হতো। এখন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা হয়। এর বেশি হয় না এখন।'

খুলনা অঞ্চলের খরস্রোতা নদীগুলোর বেশিরভাগই যেন প্রাণহীন শুকনো মরুভূমি। যেসব স্থানে নৌকা বা ট্রলার ব্যবহার করে নগরীজুড়ে চলতো নানা ব্যবসা, সেখানে এখন জোয়ার ছাড়া পানির দেখা মেলে না। আর নদীর যেসব স্থানে পানির দেখা মেলে সেখানে আবর্জনা ছাড়া কিছুই নেই।

খুলনার মৃতপ্রায় নদী। ছবি: এখন টিভি

স্থানীয়রা বলেন, একসময় এসব নদীতে ১৮ থেকে ২০ হাত গভীর পানি থাকত। এখন বর্তমানে আড়াই থেকে তিন হাত পানিই থাকে না বলে জানান তারা।

গেলো অক্টোবরের অসময়ের বৃষ্টিতে খুলনার ফুলতলা, ডুমুরিয়া ও যশোরের অভয়নগর এলাকাজুড়ে ২৫ হাজার হেক্টর কৃষি জমি পানিতে তলিয়ে যায়। যা এখনও পুষিয়ে নিতে পারেননি স্থানীয় কৃষকরা। এছাড়াও ভদ্রা, হামকুড়া, শালতা নদী ভরাট হওয়ায় ভারি বর্ষা বা বন্যায় ডুবে যায় দুই পাড়ের ফসলের বীজতলা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশবান্ধব উপায়ে নদীর ব্যবহার না হওয়ায় বেশিরভাগ নদী বন্ধ হয়ে গেছে। এতে নদীর আগের অবস্থা ফিরিয়ে আনতে দেশি-বিদেশি সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া জরুরি।

উপকূলীয় পানি সম্মেলন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামীম আরেফির বলেন, 'নদীর পানি উপচে গেলে সে পানিগুলো ধারণ করার জন্য জলাভূমিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। জলাভূমি রক্ষা ও নদীর সুরক্ষায় পৃথিবীর সবদেশের একসাথে কার্যকরী ভূমিকা নিতে হবে।'

অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ'র কর্মকর্তারা বলছেন, নদীপথ সচল রাখতে ড্রেজিংয়ের কাজ যেমন চলমান রয়েছে তেমনি ভরাট হয়ে যাওয়া নদীর খনন কাজও চলছে।

খুলনা বিআইডব্লিইটিএ'র বন্দর কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী নৌযান যে পথে চলাচল করে সে পথগুলোতে চলাচল সচল রাখার জন্য ড্রেজিং করছি এবং আরও করা হবে।'

পরিসংখ্যান অনুযায়ী স্বাধীনতা পরবর্তী খুলনা অঞ্চলের ২৮টি নদীর অস্তিত্ব হারিয়েছে। আর ১০টির অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে।

একসময় নদীকেন্দ্রীক অর্থনীতি ছিল দক্ষিণাঞ্চলের মূল চালিকাশক্তি। নদীকে ঘিরেই নিয়ন্ত্রিত হতো এখানকার অর্থনীতি। ৯০ দশকের গোড়ার দিক থেকে একের পর এক দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলো মৃত হয়ে যাওয়ায় এখানকার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যমে হয়ে পড়েছে সড়ক পথ।

মৃত নদীগুলো ফের খনন করলে এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্যে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসবে। সেই সাথে গতিশীল হবে অর্থনীতি এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এসএস