ফেব্রুয়ারির চিরচেনা গৌরবের মেলা সামনে রেখে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। মাঘের কুয়াশামাখা ভোর থেকেই কর্মব্যস্ত নির্মাণ শ্রমিকরা। সন্ধ্যা পর্যন্ত এই কাজ চলে । স্টলের নির্মাণসামগ্রীর যোগান আর নান্দনিক ডিজাইন করতে ব্যস্ততা তাদের।
নির্মাণ শ্রমিকরা বলেন, 'ডিজাইন-কাটিংয়ের কাজ করতাছি, বক্স বানাইতেছি। গ্যালারির কাজ আছে। গত বছরের তুলনায় এ বছরে কাজ অনেক বেশি। আমরাও সুবিধা পাইতেছি। ৫০-৬০ জন একসাথে কাজ করি।'
এ বছর কোন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টকে মেলার নির্মাণ কাজে যুক্ত করা হয়নি। নিজস্ব উদ্যোগেই বাংলা একাডেমি পুরো আয়োজন শেষ করছে। নির্বিঘ্নে বইমেলা আয়োজন করতে গঠন করা হয়েছে ৭টি কমিটি, যারা প্রাক প্রস্তুতি থেকে শুরু করে মাসব্যাপী মেলা তত্ত্বাবধান করবেন। পাশাপাশি এ বছর মেলায় বেশকিছু নতুন স্টলের আবেদন জমা পড়েছে। বাছাই প্রক্রিয়া শেষে বরাদ্দ দেয়া হবে।
অমর একুশে বইমেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, '২০০৬ সালের পূর্বে বাংলা একাডেমি এককভাবে মেলা পরিচালনা করতো। পরবর্তীতে মেলার যে বিস্তৃতি ঘটলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, যার ফলে আমরা সহযোগিতার প্রয়োজন বোধ করি। ওই জায়গাটাই আমাদের ভুল ছিল। সার্বিকভাবে মেলার ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। গতবার যারা স্টল নিয়েছেন সেটা এবারও অক্ষুণ্ণ থাকবে। তবে তা সংখ্যায় বাড়বে না, আর প্যাভিলিয়নও বাড়বে না।'
মেলা প্রাঙ্গণের কাজ যখন তুঙ্গে, তখন ছাপা মেশিন থেমে নেই। দিন-রাত অবিরাম বই ছাপানোর কাজ চলছে। ছাপা মেশিন থেকে বের করে চলে বই বাঁধাইয়ের কাজ। কালির অক্ষরে ছাপা গল্প, কবিতা, উপন্যাস ধীরে ধীরে মলাটবদ্ধ বইয়ে রূপ পাচ্ছে।
বই ছাপার এই ব্যস্ততা বইমেলার পুরোটা সময় ধরে চলবে। যা এই খাতের মানুষদের আশার সঞ্চার করছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, 'এখন কাজের চাপে আছি, ফেব্রুয়ারিতে চাপ আরও বাড়বে। এখন পর্যন্ত ৫০টি বইয়ের আইটেমের কাজ পেয়েছি। আশা করছি আরও ১০০ থেকে ১৫০টির কাজ পাবো।'
গত বছর বইমেলায় ছিল দর্শণার্থীদের ভিড়
প্রাণের মেলার জন্য প্রকাশকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন। মেলার ঠিক আগ মুহূর্তে তাদের ব্যস্ততাও বেড়েছে। প্রকাশকরা জানান, পাঠকদের মেলামুখী করতে নবীন-প্রবীণ লেখকের সমন্বয়সহ গবেষণা ও বিজ্ঞানমনস্ক বই প্রকাশে জোর দেয়া হচ্ছে। কিন্তু স্টল বরাদ্দে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় শেষ মুহূর্তে সাজসজ্জায় চাপে পড়ার শঙ্কা করছেন।
অনন্যা প্রকাশনীর প্রকাশক মনিরুল ইসলাম বলেন, 'স্টল বা প্যাভিলিয়নগুলো কেন ১০-১২ দিন আগে দেওয়া হয় না। ২৩ তারিখে দিবে আর এক তারিখে বইমেলা। এটা বিশাল কর্মযজ্ঞের ব্যাপা, অনেক কাজ থাকে।'
সময় প্রকাশনের প্রকাশক ফরিদ হোসেন বলেন, 'প্রতি বইমেলাতে আমরা নতুন নতুন পরিকল্পনা করি। কিভাবে আগের বইমেলার চেয়ে কিছুটা ভিন্নতা আনা যায়। এবার কিছুটা ভিন্নতা আনতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক এবং শিশু-কিশোরদের বই নিয়ে আসছি। কারণ পাঠক বই বিমুখ হয়ে যাচ্ছে।'
করোনার সময় থেকে খুব একটা সাড়া জাগছে না প্রাণের মেলায়। গেল বছর কাগজের দাম ছাড়িয়ে যায় দেড় লাখ টাকা টন। বেড়েছে কালিসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের খরচ। আর এর প্রভাবে বই বিক্রি কমেছে। মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়ার শঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। তবে এবার নতুন করে বইয়ের দাম বৃদ্ধি বাড়বে না বলে জানান তারা।
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল বলেন, 'বইয়ের দাম গতবার বেড়েছিলো এবারও বাড়তি দামটাই রয়ে গেছে। বই কিনতে পাঠকদের একটু কষ্ট হবে। আমরা বই প্রকাশ করতেও একটু কষ্টবোধ করছি। ১০০টির জায়গায় এবার ৭০টি বই বের করবো।'
আগামীকাল ২০ জানুয়ারি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন হয়ে সকাল সন্ধ্যা চলবে মেট্রোরেল, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা দেখছেন আয়োজক ও প্রকাশকরা।