বাল্যবিয়ে, ইভটিজিংসহ সমাজ থেকে কুসংস্কার দূর করার প্রত্যয় নিয়ে ওরা এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে।
৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী বৈশাখী গুপ্তের বাড়ি বিদ্যালয় থেকে আট কিলোমিটার দূরে। এতটা দূরত্ব হলেও তার কষ্ট বা ক্লান্তি নেই। কারণ তিন বছর ধরে বৈশাখী যাতায়াত করছে সাইকেলে। তবে এর আগে ভ্যান অথবা ইজিবাইকের উপর নির্ভর করতে হতো। যাতায়াত ও অন্যান্য কাজে খরচ হতো ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। কখনও টাকার অভাবে বন্ধ থাকতো বিদ্যালয়ে আসা।
বাস্তবতা বিবেচনায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে একটি সাইকেল কিনে দেয়। অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে এখন প্রতিদিন নিয়মিত সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাওয়া আসা করে এই শিক্ষার্থী।
বৈশাখী গুপ্ত জানায়, 'অনেক সময় গাড়ি পাওয়া যেতো না। তাই হেটে স্কুলে যেতে হতো। প্রথম ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারতো না। স্যারেরা সাইকেল দেয়াতে সময় বেচে গেছে অনেকটা।'
দুই চাকার যানের সুফল ভোগ করছেন নড়াইল সদরের গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় শতভাগ ছাত্রী। বছর দশেক আগে ছেলেরা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াত করলেও ভ্যানে ও মেয়েদের স্কুলে আসা যাওয়া করতে হতো পায়ে হেঁটে।
যাতায়াতের অসুবিধার কারণে অনিয়মিত উপস্থিতি ও পড়াশোনা বন্ধ করে দেয় অনেক শিক্ষার্থী। সমস্যা নিরসনে শিক্ষক, অভিভাবক এবং পরিচালনা পরিষদ এগিয়ে আসেন।
ছাত্রীরা জানায়, 'আগে হেঁটে আসলে এক-দুই ঘণ্টা লাগতো। সাইকেলে আসলে কষ্টটা কম হয়। হেঁটে আসার সময় অনেক ছেলেরা বিরক্ত করতো। কিন্তু সাইকেলে আসার ফলে তারা সে সুযোগটা পায় না।'
সাইকেল চালিয়ে স্কুল থেকে বাড়ির পথে শিক্ষার্থীরা
মেয়েরা সাইকেল চালিয়ে আসা যাওয়া করায় প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি বেড়েছে। এলাকার শতভাগ মেয়ে এখন স্কুলমুখী। পরীক্ষার ফলাফলের উপরও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হলে স্কুল কমিটির পক্ষ থেকে সেটা দ্রুত সমাধান করা হয় বলে জানান গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শংকর কুমার পাঠক। বলেন, 'মেয়েরা স্বাচ্ছন্দ্যে সাইকেল চালায়। যদি সামান্য কোন সমস্যা হয় তাহলে শিক্ষকগণ এবং কমিটি মিলে দ্রুততার সাথে সমাধান করে দেয়।'
গুয়াখোলা মাধ্যামিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, 'স্কুল থেকে ছেলেমেয়ে উভয়কেই আমরা সাইকেল চালানোর প্রশিক্ষণ দেই। শিক্ষকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের খোঁজ নেন। অনেক ঝরে পড়া শিক্ষার্থী আমরা নিয়ে আসি। অনেক দূর থেকে তারা সাইকেলের মাধ্যমে স্কুলে আসে।'
জেলার অন্য স্কুলেও শিক্ষার্থীদের বাইসাইকেলে যাতায়াতের জন্য উৎসাহিত করার কথা জানান জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ জাহাঙ্গির আলম। বলেন, 'এই উদ্যোগটা যেন অন্যরাও গ্রহণ করে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ানো সহজ করতে আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকবে।'
স্থানীয়রা মনে করেন প্রত্যন্ত অঞ্চল হলেও শিক্ষক ও এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়ের ছেলেদের পাশাপাশি মেয়ে শিক্ষার্থীদের সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াতের ঘটনাটি একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এভাবে যদি অন্যান্য স্কুলের শিক্ষার্থীরা বাইসাইকেলকে বাহন হিসেবে বেছে নেয় তাহলে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে।