বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পরিবেশ রক্ষার চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। আর প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে বাতাস, পানি এবং হারাচ্ছে কৃষি জমি। এতে বেড়েই চলেছে খাদ্য সংকট।
বাংলাদেশে কৃষি জমি কমে যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম ইটের ভাটা। ফসলি জমি দখল ও নষ্ট করে তৈরি করা হয় এই ভাটা। এতে আশেপাশের অর্ধেক জমি চাষের অনুপযোগী হয়ে যায়। সেই সঙ্গে ভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া ক্ষতি করে বাতাসের।
বিশ্বের মধ্যে ইটের ভাটা সবচেয়ে বেশি এশিয়া মহাদেশে। এর মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে চতুর্থ স্থানে। বাংলাদেশে প্রায় ৮ হাজার ইটের ভাটা রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ অবৈধ ও পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই কার্যক্রম চালাচ্ছে। যেখানে প্রতি বছর ৩২ বিলিয়ন পিসের বেশি ইট উৎপাদন হয়। আর এই ইট উৎপাদনে ১৩ কোটি টন কৃষি জমির উর্বর মাটি নষ্ট হচ্ছে। এতে ৫৬ লাখ মেট্রিক টন কয়লা এবং ২০ থেকে ৩০ লাখ বড় কাঠের টুকরো পোড়ানো হয়।
পরিবেশ রক্ষায় ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে সব ইটের ভাটা সরকার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলেও পরে সেটা ২০৩০ সাল করা হয়। এর বিপরীতে কংক্রিটের ইট বা ইকো ব্লক তৈরি ও ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে পরিবেশের সঙ্গে যেমন জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতা করবে, তেমন আবাদি জমি এবং খাদ্য সংকট দূর করবে।
৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু করা যায় এই ইট উৎপাদন। সাধারণত তিন ধরনের ইট তৈরি হয়। এখন পর্যন্ত সব জায়গায় এর এই ইটের চাহিদা না থাকায় শুধুমাত্র কেনার আদেশ পেলে সে অনুযায়ী উৎপাদন করা হয়। তবে বর্তমানে সরকারের সব ধরনের প্রকল্পে এই ইটের ব্যবহার বাড়ানো হয়েছে।
ইকো ব্লক তৈরি হচ্ছে।
ইকো ব্লক তৈরির বিষয়ে মালিকরা বলেন, ‘আমরা চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন করি। প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২ হাজার উৎপাদন সম্ভব।’
প্রতিটি কংক্রিট ইটের দাম ১১ থেকে ১৩ টাকা। বাসাবাড়ি তৈরিতে সব থেকে বেশি ব্যবহৃত একটি কংক্রিট ইট সাড়ে ৪টি ইটের সমান। এ ধরনের প্রতিটি ইটের মূল্য ৪০ টাকা। অন্যদিকে সাড়ে ৪টি লাল ইটের বাজার মূল্য প্রায় ৬০ থেকে ৮০ টাকা। সে হিসেবে ব্লকের তুলনায় লাল ইট ২০ থেকে ৪০ টাকা লোকসান দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
পরিবেশ রক্ষায় ইটের ভাটা বন্ধ করে এ ধরনের ব্লক বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন বলে জানান পরিবেশবিদরা।
পরিবেশবিদ অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ‘এক দশক আগে থেকে এই ব্লকের উৎপাদন ও ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু এই ব্লকের ব্যবহার এখনও জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি। এজন্য ব্লকের ব্যবহারের বিষয়ে জনগণকে উৎসাহিত করতে হবে। ’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দূষণ কমানো যেমন জরুরি তেমন চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য উৎপাদনে কৃষি জমি রক্ষা করতে হবে।