স্বাস্থ্য
দেশে এখন
0

ডা. কামরুলের দেড় হাজার কিডনি প্রতিস্থাপনের মাইলফলক

বিনা পারিশ্রমিকে সার্জারি করেন এই অধ্যাপক

নিজের পারিশ্রমিক ছাড়া ১ হাজার কিডনি প্রতিস্থাপন করে দেশ বিদেশে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন অধ্যাপক কামরুল ইসলাম। মানবিক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।

এরপর দায়িত্ববোধ যেন আরও বেড়ে যায়। মাত্র ২৬ মাসে আরও ৫শ' কিডনি প্রতিস্থাপন করে নিজেই নিজের রেকর্ড ভাঙেন। কোভিডকালে সরকারী বেসরকারী সব হাসপাতালে প্রতিস্থাপন প্রায় বন্ধ হলেও তিনি ২৫০টি কিডনি প্রতিস্থাপন করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।

অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, 'প্রথম চার-পাঁচটা কাজ সফল হওয়ার পর আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। শুরুর দিকে আমরা মাসে একটা করে কিডনি প্রতিস্থাপন করতাম। মূলত রোগীরা জোর করাতেই আমরা বাধ্য হয়েছি।'

রোগীদের মাত্রাতিরিক্ত চাপ ও মানুষের অসহায়ত্ব ঘোঁচাতে তিনি এখন সপ্তাহে ৫টি প্রতিস্থাপন করছেন। নিজ হাতে গড়া সিকেডি অ্যান্ড ইউোরোলজি হাসপাতালের রেকর্ড বলছে, প্রতিস্থাপনের পর ১ বছর কিডনি সচল থাকার হার ৯৪ শতাংশ। ৩ বছর পর্যন্ত ৮৪ শতাংশ, ৫ বছর পর্যন্ত ৭২ শতাংশ এবং ১০ বছর পর্যন্ত কিডনি সচল বা সুস্থ থাকার হার ৫০ শতাংশ।

কিডনি প্রতিস্থাপনে সফলতার হার

এক রোগী বলেন, 'এখানের অপারেশন অনেক ভালো। স্যারের কথার সাথে কাজের অনেক মিল। আমার এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা হয় নাই।'

তরুণদের কিডনি দানের হার বেশি হলে গ্রহীতারা আরও দীর্ঘ সময় সুস্থ থাকতে পারতো বলে মত অধ্যাপক কামরুল ইসলামের।

তিনি বলেন, 'বয়স্করা যে কিডনিগুলো দান করে সেগুলো ততটা ভালো হয়না। কিন্তু ইয়াং কিডনি অনেক ভালো কাজ করে।'

সফল প্রতিস্থাপনের পরও ফলোআপ, পরীক্ষা নীরিক্ষায় খরচ চালাতে না পারায় অনেকে মৃত্যুর শিকার হন। সেদিক বিবেচনায় সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে প্রতিস্থাপন করা প্রতিটি রোগীর আমৃত্যু বিনামূল্যে ফলোআপ ও পরীক্ষা নীরিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছেন কামরুল ইসলাম।

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের এখানে অনেক পুরনো রোগীরাও ফলোআপ করাতে আসে। তখন অনেক পরীক্ষাই ফ্রী করে দেই। যেন আমরা তাদের দেখভাল করতে পারি।'

শুধু প্রতিস্থাপন নয়, উপযুক্ত ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন তৈরিতে অধ্যাপক কামরুল ইসলামের জুড়ি নেই বলে জানান ১৫০০ কিডনি প্রতিস্থাপনের সাক্ষী একমাত্র সার্জন জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. তৌহিদ বেলাল।

তিনি বলেন, আমি স্যারের সাথে ২০০৭ সালের নভেম্বর থেকেই আছি। কাজ শেখানো, কঠিন মুহূর্ত মোকাবিলা করা আর দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে স্যারের কমতি নেই।

কিডনি প্রতিস্থাপনের মুর্হূতে ডা. কামরুল

জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটে প্রথম প্রতিস্থাপন শুরু হয়েছিলো অধ্যাপক কামরুল ইসলামের হাত ধরে। ৫০ এর অধিক প্রতিস্থাপন করা ইনস্টিটিউট এখন বিনামূল্যে কিডনি প্রতিস্থাপন করছে। প্রতি সপ্তাহে একের অধিক কিডনি প্রতিস্থাপনের অঙ্গীকার ইনস্টিটিউটটির পরিচালকের।

অধ্যাপক ডা. মো. বাবরুল আলম বলেন, 'সফলতার জন্য আমরা কামরুল স্যারকে অন্তর থেকে শুভেচ্ছা জানাই। আমরাও শুরু করেছি। আশা করছি ল্যান্ডমার্কে পৌঁছাতে পারবো।'

এক হাতে দেশের এক তৃতীয়াংশ কিডনি প্রতিস্থাপনের পর এখন হাসপাতালের পরিসর বাড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন তিনি। প্রতিস্থাপনের সংখ্যা বাড়াতে আগামিতে ক্যাডাভারিক বা ব্রেইন ডেথ রোগীর শরীর থেকে কিডনি নিয়ে তা প্রতিস্থাপনের দিকে বেশি নজর দিচ্ছেন এই মানবিক চিকিৎসক।

এভিএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর