অর্থনীতি
দেশে এখন
0

কিশোরগঞ্জে কমেছে শুঁটকির উৎপাদন, চট্টগ্রামে বেড়েছে দাম

শুঁটকির বন্দর নামে পরিচিত চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জে প্রতি সপ্তাহে ১০০ কোটি টাকার বেচাবিক্রি।

দেশের শুঁটকি উৎপাদনের অন্যতম কেন্দ্র কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের দাসপাড়া এলাকা। কালী নদীর তীরে গড়ে তোলা হয়েছে শুঁটকির ক্ষেত্র। হাওরের মিঠাপানির মাছে সমৃদ্ধ এই শুঁটকি পল্লিতে প্রতিদিন আসে শোল, বোয়াল, পুঁটিসহ হরেক প্রজাতির মাছ।

পরে নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তৈরি হয় শুঁটকি। বিষমুক্ত হওয়ায় এখানকার শুঁটকির কদর বেশ। রাজধানীসহ ব্যবসায়ীদের হাত ধরে চলে যায় দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

এমনকি মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপ-আমেরিকার বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায়ও বেশ জনপ্রিয়। তবে, পুঁজির অভাবে লাভের অংক চলে যায় মহাজনের পকেটে। মূলধনের অভাবে অনেকে গুটিয়ে নিয়েছেন শুটকি ব্যবসা। শতাধিক ডাঙ্গির মধ্যে এখন টিকে আছে মাত্র ৬০টি।

শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রের নারী শ্রমিকরা বলেন, 'আমরা মাছের ছাল ছাড়িয়ে দেই, বিনিময়ে পাই ২০০০ টাকা। আর মাছের ভিতরের অংশ ত্রিশটাকা কেজি বিক্রি করি।'

সিনিয়র মৎস্য অফিসার শেখ মোহাম্মদ মাসুদ রানা বলেন, 'এবার হাওরে পানির স্থায়িত্ব কম সময়ের জন্য থাকায় মা মাছগুলো ডিম ছাড়তে পারেনি। তাই এবার উৎপাদন কমবে।'

শুটকি পল্লিতে মাছকাটা থেকে শুরু করে পুরো প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত শতাধিক নারী শ্রমিক। তাদের প্রতিদিন রোজগার হয় ২ থেকে ৩শ' টাকা পর্যন্ত। সরকারি ঋণ সুবিধা পেলে উৎপাদন বাড়ানোসহ অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে কুলিয়ারচরের এই শুটকি শিল্প।

অন্যদিকে চট্টগ্রামের শুঁটকির বাজারে হরদম চলে বেচাকেনা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্রেতা বিক্রেতায় মুখর হয় চারপাশ।

আড়তে আড়তে হরেক রকম শুঁটকির সমাহার। শুঁটকির মান আর দামে আছে ব্যাপক ফারাক। দাম শুনলে চোখ কপালে উঠবে এমন শুঁটকিও আছে এই বাজারে।

এখানকার সবচেয়ে দামি শুঁটকির নাম লাক্ষা। ওজনে প্রায় এক কেজি থেকে তিন কেজি পর্যন্ত। প্রতিকেজি লাক্ষা শুঁটকির দাম ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। সেক্ষেত্রে ৩ কেজির একটি শুঁটকি কিনতে লেগে যায় ১৫ হাজার টাকা।

দামের দিক দিয়ে এরপরেই আছে রুঁপচাদা। বড় আকারের এক কেজির দাম পড়ে সাড়ে চার হাজার টাকা।

মেসার্স জান্নাত ট্রেডিংয়ের তৌকির ইসলাম জানান, 'এককেজি শুঁটকিতে প্রায় ৪ কেজি মাছ লাগে। আড়তের কমিশন, ট্রান্সপোর্ট খরচসহ দাম পড়ে।'

রয়েছে বিচিত্র ধরণের শুঁটকিও। এই যেমন ডলফিন শুঁটকি। বিশালাকৃতির হাঙরের মাংস কেটে তৈরি এই শুঁটকি। রয়েছে শাপলাপাতা ও বাঁশপাতা মাছের শুঁটকিও। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং বৌদ্ধ সমাজের কাছে এই শুঁটকির চাহিদা বেশ।

চট্টগ্রামের এই আসাদগঞ্জে অন্তত ৪৫ রকমের শুঁটকি বিকিকিনি হয়। হাটবারে দৈনিক বেচাকেনা ছাড়িয়ে যায় শত কোটি টাকা

ব্যবসায়ী রাজিব বড়ুয়া বলেন, 'বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শুঁটকির বাজার আসাদগঞ্জ। প্রতি শনি ও মঙ্গলবারসহ প্রতি সপ্তাহে প্রায় একশো কোটি টাকার লেনদেন হয়।'

দেশের নানা প্রান্ত থেকে ব্যাপারীরা এখান থেকে শুঁটকি নিয়ে যান। তবে সাগরে মাছ কম পাওয়া যাওয়ায় শুঁটকির উৎপাদন হয়েছে কম। এছাড়াও ডলার সঙ্কটে কমেছে আমদানি করা শুঁটকির সরবরাহও। ফলে চড়েছে দাম।

আসাদগঞ্জ শুঁটকি ব্যবসায়ী সমিতির নেতা নাজিম উদ্দীন বলেন, 'শুধু দেশি মাল দিয়ে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। ভারত, মায়ানমার ও পাকিস্তান থেকেও মাছ আমদানি করা হয়।'

আসাদগঞ্জে লাইট্টা শুঁটকি ৬০০ থেকে ১১০০ টাকা, ছুরি শুঁটকি ১০০০ থেকে ২৫০০ টাকা। এছাড়া, চিংড়ি শুঁটকি ১৩০০ থেকে ১৭৮০ টাকা এবং ফাইস্যা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। প্রায় সাড়ে ৩৫০ শুঁটকির দোকার আর আড়ত মিলে এটিই দেশের সবচেয়ে বড় শুঁটকির বাজার।