যানজটের অন্যতম ভুক্তভোগী কর্মজীবীরা। তাদের দিনের অধিকাংশ সময় যানজট আর অফিসে চলে যায়। ফলে পরিবারের সদস্যদের সময় দিতে পারছেন না। আর শিশুরা আনন্দময় শৈশব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এক নারী কর্মজীবী বলেন, ‘যানজটের কারণে পরিবারকে সময় দিতে পারছি না। আবার নিজের দায়িত্ব পালন করতে কষ্ট হয়। এই জ্যামে আমার অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।’
যানজট কতটা ভয়াবহ, তা বিশ্বের অন্য কোন শহরের সঙ্গে তুলনাও করা যায় না। কেননা বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর এখন ঢাকা। আর দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা দেখে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও হতাশ, ভোগান্তি নিয়ে তাদের অভিযোগও রয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চে প্রকাশিত সবচেয়ে ধীরগতির শহরের তালিকায় ঢাকা ছাড়াও দেশের ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম রয়েছে।
২০২০ সালে পরিচালিত বুয়েটের এক গবেষণায় দেখা যায়, সড়কে ব্যস্ত সময়ে চলাচল করা যানবাহনের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার। আর ২০২২ সালে এই গতি নেমে এসেছে প্রায় ৪.৮ কিলোমিটারে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক জরিপে দেখা যায়, ঢাকাবাসীকে সড়কে প্রতি ২ ঘণ্টায় ৪৬ মিনিট যানজটে আটকে থাকতে হয়। আর বছরে জনপ্রতি গড়ে ২৭৬ ঘণ্টা যানজটে নষ্ট হচ্ছে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, 'প্রতিদিন ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। এখানে অর্থনীতির বেশি ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের গবেষণায় দেখা যায়, যানজটে দৈনিক প্রায় দেড়শ' কোটি টাকার বেশি অপচয় হয়।'
আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি যানজটে মানুষের স্বাস্থ্যগত ক্ষতি হচ্ছে। অধিক সময় যানজটে আটকে থাকায় চালকের মধ্যে ক্রোধ ও অস্থিরতা দেখা দেয়।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার ওপর চাপ কমাতে বিকেন্দ্রীকরণ দরকার। শহরের সড়কের শতভাগ ব্যবহার, ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে উন্নতমানের গণপরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া প্রধান সড়কে রিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে যানজট কমে যাবে।
ট্রাফিক পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান বলেন, 'প্রত্যেকটি সড়কে কী ধরনের যানজট হচ্ছে তা চিহ্নিত করে আমাদের পক্ষ থেকে নানামুখী কাজ করা হচ্ছে।'