বৃষ্টি নেই প্রায় একমাস, সঙ্গে শীত মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাই রীতি বা প্রকৃতির নিয়ম। এ বছর সব রীতি ভেঙে এখনও আধিপত্য চালাচ্ছে ডেঙ্গু। খাল কিংবা জলাশয়ে লার্ভা যেমন আছে, মশার উপদ্রবও এলাকাগুলোতে বেড়েছে সমানতালে। ডেঙ্গু এখনও চোখ রাঙাচ্ছে বলে জানান যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া ও ডেমরার বাসিন্দারা। এমনই এক বাসিন্দা এখন টেলিভিশনকে জানান, 'সূর্য ডুবলেই মশা চারদিক থেকে ঘিরে ধরে।'
দোলাইপাড় এলাকার বর্ণমালা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষ করে বের হচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু এ মৌসুমেও তাদের মধ্যে অনেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা এতে স্কুলে আসছে কম। স্কুলের অধ্যক্ষ ভূঁইয়া আবদুর রহমান জানান, 'স্কুলের প্রতিটি শ্রেণীতে গড়ে ১০ জন করে শিক্ষার্থী অসুস্থ হচ্ছে।'
গত কয়েক মাস আগে যাত্রাবাড়ী, মুগদা, শনির আখড়া, মানিকনগরসহ বেশ কিছু এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের হারের দিক থেকে রেড জোন ঘোষণা করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। যদিও প্রকৃতিতে বৃষ্টির দেখা নেই এবং শীতের শুরু হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে নি।
ডেঙ্গুর প্রকোপ যে কমেনি তা হাসপাতালগুলোর ভিড় দেখলেই বোঝা যায়। এই যেমন নাসিমা খাতুন মুগদা হাসপাতালে ছেলেকে নিয়ে এসেছেন ডেমরা থেকে। হাসপাতাল শয্যার পাশে বসে ছেলেকে নিয়ে চিন্তার শেষ নেই এই তার। প্রহর গুনছেন কখন সুস্থ হবে সন্তান।
ডেঙ্গু যখন কমার কথা তখনও পুরো পরিবারের আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে কেউ কেউ। আবার কেউবা মাদারীপুর, কুমিল্লা কিংবা নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকেও ঢাকার হাসপাতালে ভিড় করছেন।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন, অন্য বছর এই সময়ে এটা কমতো, এবার সে লক্ষণ কম। এই মৌসুমেও ঢাকার বাইরের রোগী বাড়তে থাকায় ভাবাচ্ছে তাদের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছেত, নভেম্বরের ৯ দিনেই মৃত্যু প্রায় শ' খানেক, আক্রান্ত ১৩ হাজারের বেশি। গতবছরের এ সময়ের তুলনায় আক্রান্তের হার অস্বাভাবিক।
বিএসএমএমইউ এর ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক উপাচার্য ও চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, যখন ডেঙ্গুর উপদ্রব বাড়ছিল তখন মানুষ গ্রামে যাওয়ায় সাধারণ মশাও ডেঙ্গুবাহিত হয়ে যায়। আর ডেঙ্গুবাহিত মশার ডিমও ডেঙ্গু জীবাণু বহন করে। এতেই এখনও বাড়ছে ডেঙ্গু।
শীতের মৌসুমে মশা কম থাকলেও মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। সঙ্গে বাসায় সতর্ক থাকার পরামর্শ এই বিশেষজ্ঞের।