নির্বাচনের ৬৩ দিন আগে তফসিল ঘোষণাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা

ড. বদিউল আলম মজুমদার ও জেসমিন টুলি
ড. বদিউল আলম মজুমদার ও জেসমিন টুলি | ছবি: এখন টিভি
0

মনোনয়ন দাখিল, যাচাই-বাছাই বা আপিল নিষ্পত্তির সময় বাড়িয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট গ্রহণের ৬৩ দিন আগে যে তফসিল দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সেটাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তবে তারা মনে করেন, গুরুত্বপূর্ণ হলো একটি ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠান। তফসিলের বক্তব্যে গণভোটের বিষয়টি স্পষ্ট না করায় হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেকে। বিশ্লেষকদের মত, অভিজ্ঞতা না থাকা কমিশন যে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সক্ষম তার প্রমাণ দিতে হবে শুরু থেকেই।

অভ্যুত্থানের মুখে শূন্য এ সংসদে আবার নিজেদের মনোনীত প্রতিনিধি পাঠানোর সুযোগ পাচ্ছে অভ্যুত্থানের জনতা।

অনেক ষড়যন্ত্র তথ্য আর গুঞ্জনের কুয়াশা ভেদ করে সংসদ নির্বাচনের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬। ভোটগ্রহণের এতটা দিন আগে এরকম তফসিল ঘোষণার ইতিহাস আছে সামরিক আমলে। এবারে পার্থক্যটা ৬৩ দিন হলেও ১৯৮৮ সালে এরশাদ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচনটির ক্ষেত্রে এ পার্থক্যটা ৬৮ দিনের।

মনোনয়ন দাখিল, যাচাই-বাছাই কিংবা আপিল নিষ্পত্তির সময়সীমার বাড়ানোর এসব ব্যাপারে নির্বাচন বিশ্লেষকরা ব্যতিক্রমী বিষয় হিসেবেই চিহ্নিত করছেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে। এটা রুটিন ব্যাপার। কতটুকু বাস্তবায়িত হয় সঠিকভাবে। আর একইসঙ্গে যদি গণভোটের মাধ্যমে আমাদের সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন হয় তাহলে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক পথ সুগম হবে।’

নির্বাচন বিশ্লেষক জেসমিন টুলি বলেন, ‘প্রার্থী যাবতীয় তথ্য দিয়ে থাকে। এটা স্বল্প সময়ে হলে খুব দ্রুত যাচাই বাছাই করতে হয় রিটার্নিং অফিসারকে। অনেক সময় অনেক কিছু ঠিকমতো দেখতে পারে না। এখন যে সময় আছে তাতে সে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করতে পারবে।’

আরও পড়ুন:

এটা ঠিক গণভোট এখানে নতুন নয় আবার এটাও ঠিক জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম। রাষ্ট্র সংস্কারের ভবিষ্যৎ নির্ধারণকারী এই গণভোট তফসিলের ভাষণে গুরুত্ব সহকারে না আসায় অবশ্য হতাশা প্রকাশ করেছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা।

নির্বাচন বিশ্লেষক জেসমিন টুলি বলেন, ‘পুরো দেশের মানুষ ভোটের জন্য অপেক্ষা করছে। তিনি যদি গণভোটের ব্যাপারে আরেকটু বলতো তাহলে মানুষ সচেতন হতো।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা আশা করবো যে এর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা না করি।’

এই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তফসিলের ঘোষণা যাই হোক, মানুষের আকাঙ্ক্ষিত একটি ভালো নির্বাচন হবে কিনা তা দায় নির্ভর করছে সমানভাবে নির্বাচন কমিশন, প্রশাসনের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর ওপরেও।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের সব পাওয়ার থাকে। আমার মনে প্রশ্ন হচ্ছে তারা কি সেই ক্ষমতা সব প্রয়োগ করবে কিনা। আমাদের আরপিওতে বিধান আছে নিবন্ধিত দলগুলোর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন থাকবে না। কিন্তু এই নির্বাচন কমিশনকে কোনো রকম উদ্যোগ নিতে দেখি নাই। ’

জেসমিন টুলি বলেন, ‘এখন থেকে নির্বাচন কমিশনের ভোটারদের আস্থা বাড়াতে হবে। ভোটাররা যেন মনে করে আমরা ভালো নির্বাচনে ভোট দেবো। রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীরা যেন ভাবে আমরা একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পাবো।’

এই বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকারি ছুটির দিন ভোটের দিনের পরে হওয়ায় ভোটার অংশগ্রহণ বেশি হবে আসন্ন এই নির্বাচনে। কিন্তু কালো টাকা ও অবৈধ অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে মানুষের প্রত্যাশিত ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান চ্যালেঞ্জ হবে মনে করেন তারা।

সেজু