মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো—
১. আবুল সরকারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে—এটি জানতে পারার সঙ্গে সঙ্গে আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তখন সেখান থেকে আমাকে একটি ভিডিও ক্লিপ পাঠানো হয় এবং পরিস্থিতির উত্তাপ ও ঝুঁকির দিকগুলো ব্যাখ্যা করা হয়। আমি বুঝতে পারি, পুরো ব্যাপারটি একটি সংকটের দিকে যাচ্ছে।
যেকোনো ফৌজদারি অপরাধে পদক্ষেপ নেবার মূল দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। আমি আমার পক্ষ থেকে যা বলার বা করার, তা করেছি এবং বলছি। এর বেশি এখানে আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। মনে রাখার জন্য অনুরোধ করবো, আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ঝুঁকির ক্ষেত্রে আমার বা আমার মন্ত্রণালয়ের কোনো বিশেষ ক্ষমতা নেই। এ-সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। তারা অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে এই সংবেদনশীল বিষয়টি পরিচালনা করছে। আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।
আমি বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে সবাইকে ধৈর্য্য ও সংযম প্রদর্শনের জন্য অনুরোধ করছি। ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতিই আমাদের দেশকে সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে; অন্য কিছু কেবল ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে।
২. এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমালোচনার কিছু আকর্ষণীয় প্যাটার্ন লক্ষ্য করছি। কোনো সমালোচনার লক্ষ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়—লক্ষ্য ফারুকী। এদের মধ্যে কয়েকজনকে চিনি, যারা আমাদের কমন সার্কেলের আড্ডায় বলেছেন, ফারুকীর মন্ত্রণালয় যে ডকুমেন্টারি বানাচ্ছে তা দেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর। অনুমান করি, সেই প্রসঙ্গে ঘটে যাওয়া আবুল সরকারের ঘটনা এখন আমার ওপর আক্রমণ হিসেবে ফিরছে।
এদের উদ্দেশ্যে বিনীতভাবে বলতে চাই, এই কাজটা আমাকে করতেই হবে। শহীদরা আমাকে এই কাজ করতে পাঠিয়েছে। আমি ক্ষমা চাই, যদি এটি আপনাদের অস্বস্তিকর করে তোলে। এবং সামনে আমাদের মন্ত্রণালয় আরও অস্বস্তিকর কাজে হাত দেবে। ইতিহাসকে মুছে ফেলা বা নির্বাচিত অংশ প্রদর্শনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বুদ্ধিবৃত্তিক উপনিবেশ বানানোর প্রচেষ্টা বহু বছর ধরে চলেছে। একদল তরুণ গবেষক এখন সেই প্রকল্প যাচাই-বাছাই করছে। ফলে আমাকে আরও আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত থাকুন।
৩. সমালোচনার আরেকটি প্যাটার্ন—‘মন্ত্রণালয় লালনকে সেলিব্রেট করে, আর বাউল মারছে! ভণ্ডামী!’
আমি বুঝতে পারি না, বাউলকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কী মারলো? আপনাদের একটু গবেষণা করতে বলব। দেখবেন, ফকির-বাউলের ওপর আক্রমণের ইতিহাস অনেক পুরনো। এমনকি আওয়ামী লীগের আমলেও অনেক স্থানে বাউলদের ওপর আক্রমণ হয়েছে, চুল কেটে দেয়া হয়েছে, বাদ্যযন্ত্র ভেঙে ফেলা হয়েছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে পালাকারও গ্রেপ্তার হয়েছে।
এই বাস্তবতা মাথায় রেখেই আমরা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে সর্বোচ্চ যা সম্ভব, তাই করেছি—লালনকে জাতীয়ভাবে সেলিব্রেট করার সিদ্ধান্ত। এর মাধ্যমে বার্তা দেয়া হয়েছে যে আমরা তাদের পাশে আছি। লালন শাহ একজন গুরুত্বপূর্ণ চিন্তক-কবি-দার্শনিক। এছাড়া সারাদেশে আমরা বহু সাধুসঙ্গ করেছি। আমরা পরিষ্কারভাবে বহুত্বের পক্ষে সাংস্কৃতিক অবস্থান নিয়েছি। ৫৪ বছরে প্রথমবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ঈদ, বৌদ্ধ পূর্ণিমা, দুর্গাপূজা সেলিব্রেট করেছে। নববর্ষে সকল জাতিগোষ্ঠীকে একত্রে উৎসব করেছি। এটি হলো নতুন বাংলাদেশের ছবি, যেখানে সকল জনগোষ্ঠীর অংশ থাকবে।
৪. এখন আমার মনে হচ্ছে, সরকারের করণীয় কী? ধরুন, কোথাও মেয়েদের ফুটবল খেলা বন্ধ হলো। আমাদের করণীয় কী হবে? আমার মনে হয়, যারা এটি করেছে তাদের আইনের আওতায় আনা এবং খেলার সংখ্যা বৃদ্ধি করা। নাকি খেলা বন্ধ হওয়ায় মেয়েদের সব খেলাই বন্ধ করা উচিত? লালনকে জাতীয়ভাবে পালন করা এবং সরকারি উদ্যোগে সাধুসঙ্গ বৃদ্ধি করা কীভাবে অপরাধ হলো, বুঝতে পারছি না।
৫. সবচেয়ে তামাশাময় বিষয়—বাউলরা আক্রান্ত হয়েছে, ড্রোন শো করতে বলো ফারুকীকে? আমেনার মা রিকশা থেকে পড়ে গেছে? ফারুকীকে বলো, আরও ড্রোন শো করুক। হাহাহাহা, খুব মজার। ভাই ও বোনেরা, টেলিভিশনের আমিন চেয়ারম্যান হবেন না, প্লিজ।
আমার বন্ধু ডরোথি ওয়েনার টেলিভিশন দেখে আমাকে বলেছিলেন, ‘মানুষের সবচেয়ে বড় ভয় হলো ‘‘ফিয়ার অফ দ্য আননোন’’।’ তাই ড্রোন শো আমাদের কাছে সেই ‘আননোন থিং’। বিশ্বজুড়ে বড় ইভেন্টে এখন ড্রোন শো যুক্ত হচ্ছে। নতুন বছর, জাতীয় দিবস, পূজা, কালচারাল ফেস্টিভ্যাল—এগুলোতে ড্রোন শো এখন নতুন নিয়ম। বাংলাদেশেও তাই হয়েছে এবং আরও হবে।





