জুলাই সনদ: আল্টিমেটামের ৬ষ্ঠ দিনেও ঐকমত্য নেই, নোট অব ডিসেন্টে জট

জুলাই সনদে স্বাক্ষর করছেন প্রধান উপদেষ্টা
জুলাই সনদে স্বাক্ষর করছেন প্রধান উপদেষ্টা | ছবি: সংগৃহীত
1

সরকারের দেয়া আল্টিমেটাম ৬ষ্ঠ দিনে গড়িয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো ঐকমত্য হয়নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংকটের অন্যতম কারণ, সংস্কার প্রস্তাবে দলগুলোর দেয়া 'নোট অব ডিসেন্ট' বা ভিন্নমত। উচ্চকক্ষে পিআরসহ কিছু মৌলিক সংস্কারে বিএনপি নোট অব ডিসেন্ট তুলে নিলে বাকি দলগুলোও কিছু বিষয়ে ছাড় দিবে। এতে সংস্কারের আকার ছোট হয়ে আসবে। তবে পুরো প্যাকেজ নাকি সংক্ষিপ্ত রূপ গণভোটে যাবে? সে সিদ্ধান্ত নিবে অন্তর্বর্তী সরকার। যদিও সংস্কার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করবে আগামীর সংসদ।

দিনরাত এক করে, রুদ্ধশ্বাস এক লড়াই। কিন্তু মর্যাদাপূর্ণ পদে কে নিয়োগ পাবে, তা অনেক ক্ষেত্রেই ঠিক হতো রাজনৈতিক বিবেচনায়। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সরকারি কর্ম কমিশনেও নিয়োগ হয় রাজনৈতিকভাবে।

নামে নিরপেক্ষ ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হলেও, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে- রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, অ্যাটর্নি জেনারেল, দু‍দক চেয়ারম্যান ও নির্বাচন কমিশন।

জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত প্রতিরোধে আওয়ামী সরকারের পতনের পর সংবিধানের কিছু কালাকানুন সংস্কার করে প্রস্তুত হয়েছে জুলাই সনদ। যেখানে সিইসি নিয়োগে ৫ সদস্যের কমিটি হবে। বাছাই কমিটির সদস্য হিসেবে থাকবে সরকারি দল, সংখ্যাগরিষ্ঠ দুই বিরোধী দল এবং বিচার বিভাগের একজন প্রতিনিধি। একইভাবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ হবে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর সমন্বয়ে। তবে, ইসি ছাড়া বাকি চার প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কমিটি গঠন নিয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে বিএনপি, জাতীয়তাবাদী ১২ দলীয় জোট, এনডিএমসহ ৫টি দল। তাদের দাবি, এতে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা কমে যাবে।

জুলাই সনদ অনুযায়ী, উচ্চকক্ষের সদস্যরা নিম্নকক্ষের বিল পর্যালোচনা করবেন। তবে ২ মাসের বেশি বিল আটকে রাখার এখতিয়ার নাই তাদের।

আরও পড়ুন:

বিগত নির্বাচনে কোন দলই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পায়নি, তবে প্রচলিত নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে সরকার গঠন করেছে। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভোটের প্রতিফলন হয় না। মোট ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন হলে সব দলেরই প্রতিনিধিত্ব থাকবে।

৩১ দফায় বিএনপি দুইকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের কথা বলেছে, তাদের দাবি- উচ্চকক্ষ গঠন হবে নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে। এতে সরকারি দলই উচ্চকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে।

ঐকমত্য কমিশনে সবেচেয়ে বেশি আলোচানা হয়েছে পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন নিয়ে। বিএনপির অবস্থান পরিবর্তন না হওয়ায়, জামায়াত, ইসলামি আন্দোলনসহ ৮ টি রাজনৈতিক দল নিম্নকক্ষে পিআরের দাবিতে রাজপথে। এ অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার, দলগুলোকে ১ সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছে। সময়, গড়িয়েছে ৬ষ্ঠ দিনে। কিন্তু কোন ঐকমত্য হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ শাহান বলেন, ৯ বা ১০টা জায়গায় পার্থক্য আছে বিএনপির সঙ্গে। বাকি যেগুলো সেগুলো নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না। এখন আইডিওলস্টিক অবস্থানে এটা আশা করা খুবই দুরূহ যে এটা ১০টা ক্ষেত্রেই আপনি বিএনপির কথা শুনবেন বা ১০টা ক্ষেত্রেই আপনি এনসিপি বা জামায়াতের কথা শুনবেন। এনসিপি বা জামায়াতের কাছে এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে উচ্চকক্ষে জুলাই প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টশনটা গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে ওইটা ধরে যদি তারা আলাপ আলোচনা করে, ওইটা বাস্তবায়ন হলে যদি বাকি জিনিসগুলো ছাড় দেয় তাহলে ওইটার বেসিসে তারা একটা সমাধানে আসতে পারেন। এটা ৪-৪ হতে পারে বা ৫-৫ হতে পারে আবার ৪-৬ বা ১-৯ হতে পারে।

৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে প্রায় ৬০ টি বিষয়ে কোন না কোন দল, ভিন্নমত জানিয়েছে। সংস্কার প্রস্তাবের পুরো প্যাকেজ কিংবা সংক্ষিপ্ত প্যাকেজ গণভোটে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিবে অন্তর্বর্তী সরকার। গণভোটে পাশ হলেও, পরবর্তী সংসদে আলোচনার ভিত্তিতেই চূড়ান্ত হবে সংবিধান।

ঐকমত্য কমিশনের বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য ড. শরীফ ভূইয়া বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো একটা সুনির্দিষ্ট জায়গায় একমতে আসতে না পারে তখন সরকারকে অবশ্যই একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে এটা আমরা কিভাবে বাস্তবায়ন করতে চাই। আমরা কি সম্পূর্ণটা নিয়ে যাব নাকি আমরা একটু চিন্তা করে দেখবো যে এটাকে আরও সংক্ষিপ্ত করলে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল এটার ব্যাপারে তাদের আপত্তির ধরন বা পরিমাণ কমে আসবে যার ফলে এর বাস্তবায়ন সহজ হবে। সেটা সরকার বিবেচনা করতে পারেন। আবার সরকার পুরো প্যাকেজ নিয়েও অগ্রসর হতে পারেন। কারণ এটা তো নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছেই যাবে।

তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আদেশ জারি করবেন কে সে প্রশ্ন রয়ে গেছে। রাষ্ট্রপতি নাকি প্রধান উপদেষ্টা, সে সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার।

ইএ