ভিআইপিদের নিরাপত্তায় জনভোগান্তি কমাতে এসএসএফকে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

ড. মুহাম্মদ ইউনূস
ড. মুহাম্মদ ইউনূস | ছবি: সংগৃহীত
0

ভিআইপিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে যাতে জনভোগান্তি না হয়, সেজন্য স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সকে (এসএসএফ) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ (মঙ্গলবার, ১৮ জুন) এসএসএফের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এ নির্দেশ দেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধান উপদেষ্টা এসএসএফকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘এসএসএফ অন্যান্য বাহিনীর তুলনায় একটি ক্ষুদ্র বাহিনী, তবে এর কাজের গুরুত্ব ও সংবেদনশীলতা অনেক বেশি। এই বাহিনী আমার নেতৃত্বে ও তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। এসএসএফ একটি প্রশিক্ষিত ও সুশৃঙ্খল বাহিনী; যারা আমার ও রাষ্ট্রপতির সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। বিগত ১০ মাসে এসএসএফ দেশে-বিদেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালন করেছে। আমি এসএসএফের সার্বিক পেশাদারিত্ব ও আন্তরিকতা নিয়ে সন্তুষ্ট। এজন্য আমি এসএসএফের সব সদস্যকে ধন্যবাদ জানাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এসএসএফ বঙ্গভবনসহ আমার বাসস্থান, কার্যালয় এবং সব ধরনের গমনাগমনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। ঢাকার অভ্যন্তরে ও বাইরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা বিধান এবং সুষ্ঠু সম্পাদনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সম্প্রতি কক্সবাজার ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন এবং চট্টগ্রাম বন্দর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসএসএফ অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছে।’

তিনি বলেন, ‘শুধু দেশের অভ্যন্তরেই নয়, বিদেশ সফরেও এসএসএফ বিভিন্ন দূতাবাস এবং সংশ্লিষ্ট দেশের প্রটোকল ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে একযোগে কাজ করে সফরগুলো সফল করেছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী, পূর্ব তিমুরের রাষ্ট্রপতি এবং জাতিসংঘের মহাসচিবের সফরেও এসএসএফ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে আধুনিক প্রযুক্তি ও তথ্য আদান-প্রদান সহজ হওয়ায় নিরাপত্তা হুমকির ধরন ও প্রকৃতি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই শতভাগ নিরাপত্তা দেওয়া এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এসএসএফ দক্ষতার সঙ্গে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। আমি আশা করি, এসএসএফ নিয়মিত বিভিন্ন নিরাপত্তা হুমকি পর্যালোচনা করবে এবং তা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করবে।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সম্প্রতি এসএসএফ যমুনার সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুসংহত করেছে। আমি আশা করি, তারা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সাইবার নিরাপত্তাও উন্নত করবে। আমি আরও আশা করি, এসএসএফ একটি পেশাদার বাহিনী হিসেবে উন্নত প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও মনোবলের সমন্বয়ে ক্রমাগত উন্নতি সাধন করবে।’

ভিআইপি নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এসএসএফকে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা আরোপ করতে হয়, যা অনেক সময় জনভোগান্তির সৃষ্টি করে। এ বিষয়ে আমি তাদের যতটা সম্ভব জনভোগান্তি পরিহার করার নির্দেশ দিয়েছি। আগে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি ফ্লাইটের জন্য প্রায় এক ঘণ্টা সব ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ থাকত। এতে জটিলতা তৈরি হতো। আমি এই নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়েছি। এতে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি কমবে বলে আশা করি। জনবিচ্ছিন্ন না হয়ে, জনসংযোগ ও নিরাপত্তার মেলবন্ধনের মাধ্যমেই এসএসএফ তার দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

তিনি আরও জানান, ‘খুব শিগগিরই এসএসএফ তাদের ১২ বছরের পুরোনো ভিএইচএফ রেডিও কমিউনিকেশন সিস্টেম সংযোজন করবে, যা তাদের অভিযানিক সক্ষমতা অনেক বাড়াবে। আমি জেনে খুশি হয়েছি, এসএসএফের অত্যাধুনিক ‘‘ইনডোর ফায়ারিং রেঞ্জ’’-এর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ এবং আগামী মাস থেকে এটি ব্যবহার উপযোগী হবে।’

এই ফায়ারিং রেঞ্জের জন্য ভূমি বরাদ্দসহ অন্যান্য সহায়তার জন্য বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা। পাশাপাশি, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ সহায়তা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।

এসএস