বাড়িতে ঘেরা-বেড়া দেয়ার কাজে বেশ জনপ্রিয় বাসক গাছ। সাতক্ষীরা সদর ও আশাশুনি উপজেলার বেশকিছু গ্রাম জুড়ে রাস্তার পাশে প্রাকৃতিকভাবে জন্মায় এই গাছ। আদিকাল থেকেই সর্দি-কাশি সারাতে বাসক পাতার রস ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে দেশের বড় বড় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এই পাতা থেকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আধুনিক মানের ওষুধ তৈরি করছে (Traditional Use of Busk Leaves Continues with Scientific Medicine Production)।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি গ্রামের বিউটি বেগম। বাসক গাছ থেকে কাঁচা পাতা সংগ্রহ করে রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিতে বিক্রি করেন। প্রতি কেজি কাঁচা পাতা ৬ টাকা দরে কিনে ৪০ টাকায় কেজিতে শুকনো পাতা বিক্রি করছেন তিনি।
তার মতই এই গ্রামের আরো অনেকে বাসক পাতা সংগ্রহ করে তা রোদে শুকিয়ে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিতে বিক্রি করেন। কোম্পানির প্রতিনিধিরা সরাসরি গ্রাম থেকে এসব পাতা কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
মান ভেদে প্রতি মণ শুকনো বাসক পাতা দেড় থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এর ৬০ শতাংশ পাতা সংগ্রহ করা হচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গাছ থেকে।
বাসক পাতার চাহিদা বাড়ায় নতুন করে অনেক গ্রামের মানুষ বাড়ির চারপাশে বাসক গাছ রোপণ করছেন (Local Farmers Supplying Busk Leaves, Creating Employment Opportunities)।
গত ৬ বছর ধরে সাতক্ষীরায় বাসক পাতার এই ব্যবসা চালু হলেও সরকারি উদ্যোগে এখনো বাসক গাছ সংরক্ষণ বা বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করা যায়নি। আগামীতে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির অধীনে বাসক গাছ উৎপাদন বা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানালেই সামাজিক বন বিভাগের এই কর্মকর্তা।
সাতক্ষীরা সামাজিক বনায়ন জোনের সহকারী বন সংরক্ষক প্রিয়াংকা হালদার বলেন, গ্রাম্য পর্যায়ে আমি সবাইকে বাসক গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ করছি। এ গাছের শুকনো বা তাজা পাতা বিক্রি করে তারা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবেন তেমনি গাছ বিক্রি করেও লাভবান হবেন।’ (Lack of Government Initiatives but Future Plans by Social Forestry Department)
বাসকের বৈজ্ঞানিক নাম আঢাটোডা বাসিকা। বাসক গাছের পাতা ছিঁড়লে গাছ মার যায় না। সারা বছরই নতুন পাতা গজানো এই গাছের ডাল কেটে মাটিতে পুঁতে দিলে নতুন গাছ জন্মায়। বাণিজ্যিকভাবে বাসক গাছের চাষ শুরু করা গেলে দেশের ওষুধ শিল্পে অবদান রাখার পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতিতেও পরিবর্তন আসবে।
বাসক পাতা গাছ সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তর-Questions and answers regarding Basak leaf plants
প্রশ্ন ১: বাসক গাছের পাতার থেকে কী ধরনের ওষুধ তৈরি হয়?
উত্তর: বাসক গাছের পাতার থেকে মূলত সর্দি-কাশির জন্য সিরাপ তৈরি হয়। এই সিরাপ জার্মান প্রযুক্তির মাধ্যমে আধুনিকভাবে প্রস্তুত করা হয়।
প্রশ্ন ২: বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বাসক গাছ কোথায় জন্মে?
উত্তর: বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন গ্রামে রাস্তার পাশে প্রাকৃতিকভাবে বাসক গাছ জন্মে।
প্রশ্ন ৩: প্রতি বছর কত টন বাসক পাতা সরবরাহ হয়?
উত্তর: প্রায় ৩০ টন শুকনো বাসক পাতা প্রতি বছর সরবরাহ হয়।
প্রশ্ন ৪: বাসক গাছের বৈজ্ঞানিক নাম কী?
উত্তর: বাসক গাছের বৈজ্ঞানিক নাম আঢাটোডা বাসিকা।
প্রশ্ন ৫: বাসক গাছের পাতার ব্যবহার কেমন প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে?
উত্তর: প্রাচীনকাল থেকে বাসক পাতার রস সর্দি-কাশি সারাতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
প্রশ্ন ৬: স্থানীয় কৃষকরা বাসক গাছের পাতাগুলি কীভাবে বিক্রি করে?
উত্তর: তারা কাঁচা পাতাগুলি সংগ্রহ করে রোদে শুকিয়ে বিক্রি করেন, যেখানে কেজি প্রতি দাম হয় ৬ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত।
প্রশ্ন ৭: বাসক গাছের চাষ ও সংরক্ষণে সরকার কতটা আগ্রহী?
উত্তর: বর্তমানে সরকারের উদ্যোগ নেই, তবে সামাজিক বন বিভাগ গ্রামে বাসক গাছ লাগানোর ও সংরক্ষণের জন্য উৎসাহ দিচ্ছে।
প্রশ্ন ৮: বাসক গাছের পাতার বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর: পাতাগুলি ছিঁড়লে গাছ মারা যায় না, নতুন পাতা সারাবছর গজায়, ডাল কেটে মাটিতে পুঁতে দিলে নতুন গাছ জন্মে।





