কাউরিয়ার সুপারির বিশ্বখ্যাতি, প্রতি হাটে বেচাকেনা ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা

কাউরিয়ার সুপারির | ছবি: এখন টিভি
0

ভরপুর মৌসুমে জমজমাট বেচাকেনা হয় বরিশালের হিজলা উপজেলার কাউরিয়া বন্দরে। সকাল থেকে হাটের অংশটিই হয়ে ওঠে বেশি ব্যস্ত। যার রেশ থাকে রাত ৮টা পর্যন্ত। প্রতি শনি ও বুধবারে বেচাকেনা হয় সুপারি। স্থানীয়দের কাছে তো বটেই মোকামে এর পরিচিতি কাউরিয়ার আপেল হিসেবে।

কয়েকশ' বছর পুরানো হাটটির অন্যতম ঐতিহ্যবাহী পণ্য সুপারি। শুধু এই উপজেলারই নয়, মেহেন্দিগঞ্জ-কাজীরহাট থানা থেকেও বিক্রেতারা আসেন এখানে।

প্রবীণ ব্যবসায়ী কমল কান্তি দাস বলেন, 'ময়মনসিংহ, ঢাকা, সিলেট বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা আসে সুপারি কিনতে। আগের চেয়ে এখন বেশি সুপারি বিক্রি হয়।'

হাটের দিন সকাল থেকেই কয়েকস্তরের ক্রেতা দেখা যায়, খুচরা ক্রেতারা সাধারণত প্রবেশমুখের সড়কে দাঁড়িয়ে অল্প করে কিনে থাকে। এছাড়া আড়তগুলো ছাড়াও রাস্তার পাশে দেখা যায় অনেকেই চট বিছিয়ে করছেন সুপারি বেচাকেনা।

একটু বেশি পুঁজিওয়ালাদের দেখা যায় অস্থায়ী দোকান বসিয়ে মালামাল কিনতে। প্রায় অর্ধেক সুপারি কেনাবেচা হয় এদের মাধ্যমে। প্রান্তিক ক্রেতারাও অনেকে এ দোকানদারদের এজেন্ট হয়ে কাজ করেন। খোলা জায়গায় যাচাই-বাছাই করে কেনাবেচার সুযোগটাও বেশি।

দিনে দিনে বেড়েছে আড়তের সংখ্যা, রাজধানীসহ অন্য এলাকার পাইকার ও বড় ব্যবসায়ীরা ভাড়ার বিনিময়ে আড়তে সুপারি কেনার সুযোগ পান। চাহিদা বাড়লে একই আড়তে জায়গা ভাগ করে দেয়া হয় কয়েকজনকে।

ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ বলেন, 'এখান থেকে কিনে ট্রাকে করে মাদারীপুরে নিয়ে গিয়ে ব্যবসা করি। সেখান থেকে আবার পাইকারিভাবে অন্যান্য উপজেলায় পাঠিয়ে দেই।'

বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা জানান, 'গতবছরের তুলনায় এ বছর ফলন বেশি হয়েছে। তবে দাম কম হওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছি আমরা।'

এ হাটে সুপারি বেচাকেনা হয় 'ভি' হিসেবে। প্রতি ১০ টিতে ১ ঘা, ২৮০ টিতে এক ভি। দাম ২০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। শুধু দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে বা ঢাকা-সিলেটসহ অন্য মোকামে পাঠাতেই নয়, সংরক্ষণের জন্যও সুপারি কিনছেন অনেকে।

ক্রেতা ও বিক্রেতারা বলছেন, 'দুই বছরে যে পরিমাণ ফলন হয় তা এ বছর এক মৌসুমে হয়েছে। আমরা যে পরিমাণে সুপারি রেখেছি সে পরিমাণে বিক্রি করতে পারছি না। আমরা যারা বাগান কিনে রাখি আমাদের লোকসান হবে এবার।'

ব্যবসায়ী সাহাবুদ্দিন কাজী বলেন, 'সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কোটি টাকার সুপারির বেচাকেনা হয়।'

ব্যবসায়ী মিয়া মো. পান্নু জানান, 'রাস্তা ছোট হওয়ায় আমাদের অসুবিধা হয়। রাস্তা আর একটু বড় হইলে আমাদের জন্য ভাল হয়। বাজারের কাঠামোতে সুপারি রাখার জায়গা নেই।'

প্রতি হাটে অন্তত ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার সুপারি বেচাকেনা হয়। তিন মাস জুড়ে চলে সুপারির মূল মৌসুম । এবার ৫০ কোটি টাকার বেশি কেনাবেচার লক্ষ্যের ভিত্তিতে হাটের ইজারা নির্ধারণ হয়েছে ৫৫ লাখ টাকা।

উপজেলার প্রায় বাড়িতেই অন্যসব গাছগাছালির চেয়ে সুপারির আবাদই সবচেয়ে বেশি। দাম ভালো পাওয়ায় বাড়ছে গাছ রোপণের সংখ্যাও। সুপারির পরিমাণ বেশি বলে জায়গাটির নামকরণ করা হয়েছে গুয়াবাড়িয়া বা সুপারির বাড়ি।

গুয়াবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শাহজাহান তালুকদার বলেন, 'এই অঞ্চল থেকে এখন সারাদেশে সুপারির চাহিদা মেটানো হয়। সেজন্য আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ মাসে স্থানীয়রা খুব আনন্দে থাকে। কারণ যার কিছুই নেই তারও কিছু সুপারি আছে।'

নদীবিধৌত এলাকা হওয়ায় দিন দিন কমছে জমির পরিমাণ। অন্য কৃষিখাতের মত প্রভাব পড়ছে সুপারি চাষেও। এছাড়া গাছের পরিচর্যা এবং আধুনিক পদ্ধতিতে উৎপাদনেও ধারণা নেই অনেকের। ঐতিহ্য ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ধরে রাখতে সমস্যা সমাধানে কৃষি বিভাগের সহযোগিতা চান এলাকাবাসী।

এসএস