হাতে টাকার যোগান বাড়াতে বাড়ির গোয়ালে পালিত গরু বিক্রি করছেন কৃষক। অবরোধ, হরতালে হাটে আসছে না দূরের খামারিরা। কৃষক ও ছোট ছোট খামারিদের গরু বিক্রিতে এই প্রাণিজ আমিষের দাম কমেছে রাজশাহী ও ময়মনসিংহে। তবে চট্টগ্রামে দাম এখনও বেশ চড়া।
রাজশাহীর গ্রামগঞ্জের হাটগুলোতে এখন যে গরুগুলো বিক্রি হচ্ছে; সেখানে খামারের চেয়ে গৃহস্থের গোয়ালের গরুর সংখ্যাই বেশি। অগ্রহায়ণে নবান্নের নতুন ধানের সাথে মূলধন বাড়াতে বাড়ির গোয়ালে পালিত গরু বিক্রি করছেন কৃষক। এছাড়া গৃহস্থের নতুন ফসল উৎপাদনের যোগানে পুঁজি বাড়াতে গরু বিক্রি করছেন কৃষক ও ছোট খামারিরা।
এর ফলে সাপ্তাহিক হাটগুলোয় বাড়ছে গরুর সরবরাহ। বিপরীতে অবরোধ আর হরতালে হাটে আসছে না বড় খামারি আর দূরের ব্যপারীরা। এতে দাম কমছে বিভিন্ন মানের গরুর। আর খামারিদের দাবি খাবারের দাম, খামার ব্যবস্থাপনা মিলে হৃষ্টপুষ্ট গরু উৎপাদন খরচ বর্তমান মাংসের বাজারদরের চেয়ে বাড়তি।
নাবা ডেইরি এন্ড ক্যাটেল ফার্মের সিনিয়র ব্যবস্থাপক মো. আসাদুজ্জামান জানান, অনেকসময় দেখা যায়, গাভীর ক্ষেত্রে বাচ্চা দেয়া শেষে আর কোনো লাভ আসবে না, তখন তা কম দামে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেজন্য মাংসের দাম কিছুটা কমেছে।
রাজশাহীর মতো গরু উৎপাদনের অন্যতম জোন ময়মনসিংহেও কমেছে গরু ও গরুর মাংসের দাম।
গত একমাসের ব্যবধানে গরুর মাংসের দাম কমেছে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে দেশী ষাঁড়ের মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ এবং হাইব্রিড ৬৮০ টাকা কেজি। নিত্যপণ্যের চড়া দামের কারণে মানুষ গরুর মাংস কেনা কমিয়ে দেয়ায় বাজারে এর প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে দাম কমে যাওয়ায় গরু নিয়ে বিপাকে খামারিরা। গো-খাদ্য ও ওষুধের উচ্চমূল্যের কারণে পড়েছেন বেকায়দায়।
চট্টগ্রামে এর উল্টো চিত্র। রাজশাহী ও ময়মনসিংহের মতো দাম না কমে বেড়েছে চট্টগ্রামে। মাংস বিক্রেতারা বলছেন, গেল কোরবানি ঈদের পর থেকে ক্রয়ক্ষমতার সাথে সমন্বয় করতে গিয়ে ক্রেতারা মাংস কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। সেজন্য মাংসের চাহিদা কমে এসেছে। তবে খামারিরা বলছেন, গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মাংসের দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না।
২০২২ সালে চট্টগ্রামের বাজারে কেজিপ্রতি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছিল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। চলতি বছরের শুরুতে যা গিয়ে ঠেকে ৮০০ টাকা কেজিতে। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকায়। এমন অবস্থায় ক্রেতারা আয়-ব্যয়ের সমন্বয় করতে গিয়ে কমিয়েছেন মাংস কেনা। তবে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় মাংসের চাহিদা কমলেও কমানো সম্ভব হচ্ছে না দাম।
খামারিরা বলছেন, ছয় মাস আগেও একটি গরুর জন্য খাবার বাবদ খরচ হতো মাসে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। যা বর্তমানে গিয়ে ঠেকেছে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। বেড়েছে পশুর চিকিৎসা খরচও ।
অন্যান্য জায়গার মতো চট্টগ্রামেও মাংসের দাম কমানোর দাবি ক্রেতাদের।




