বাজার
0

নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও বৈরি আবহাওয়ায় সাগরে যেতে পারছেন না জেলেরা

চট্টগ্রাম

৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও বৈরি আবহাওয়ায় গভীর সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারছেন না হাজার হাজার জেলে। যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। এছাড়া কারফিউতে গাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি, মাছের সরবরাহ কমায় কেজিতে অন্তত ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে সব ধরনের মাছের দাম। তবে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের জেলেরা। দীর্ঘ সময় কাজহীন, আয় উপার্জন বন্ধ হয়ে আর্থিক কষ্টে পড়েছেন অনেকে।

কর্ণফুলী নদীর পাড়ে অলস বসে আছে সারি সারি ট্রলার। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার পরও বৈরি আবহাওয়ায় সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারছেনা কেউ। সুদিনের অপেক্ষায় দিন পার করছেন শত শত জেলে। মাছ ধরলেই সংসারের চাকা ঘোরে তাদের। এতোদিন কাজহীন থাকার পর সাগরের এমন বিরূপ আচরণে হতাশ নিম্ন আয়ের এসব মানুষ।

চট্টগ্রামের ফিশারিঘাট, বিস্তৃত সমুদ্র উপকূল আর গভীর সাগরে ধরা মাছ বিক্রি হয় এখানকার ১২০টি আড়তে। হরেক রকম সামুদ্রিক মাছের জন্য বিখ্যাত এ বাজারেও এখন ভাটার টান। সমুদ্রে ট্রলার যাবে, ভর্তি করে আসা মাছ বিক্রি হবে নিলামে- এমন আশায় বসে আছেন আড়ৎদাররা। উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে দুই একটি ট্রলার মাছ নিয়ে আসলেও, কাঙ্ক্ষিত মাছের দেখা মেলেনি এ মৌসুমে। সরবরাহ কম থাকায় লইট্রা, পোয়া, কোরালসহ সব ধরনের সামুদ্রিক মাছের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০-৫০ টাকা পর্যন্ত।

মাছের আড়ত। ছবি: এখন টিভি

আড়তদারদের একজন বলেন, ‘আবহাওয়া ঠিক থাকলে সমুদ্রে যাবে তখন মাছের পরিমাণ বাড়বে আড়তে।’

আরেকজন বলেন, ‘মাছের দাম আগের মতোই আছে। দাম বাড়েনি এখনো।’

ফিশারিঘাটে মিয়ানমার, ভারত, মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্তত ১৫ টি দেশের আমদানি করা মাছ পাওয়া যায় । অভ্যন্তরীণ সংঘাত গত দুই মাস ধরে আসেনি মিয়ানমারের মাছ। সাথে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় আমদানি মাছ দিয়েই চাহিদা মিটিয়েছেন ব্যাপারীর। গতকাল থেকে মিয়ানমারে মাছ আসা শুরু করলেও বাজারে দাম খুব একটা কমেনি।

ব্যবসায়ীদের একজন বলেন, ‘গত দুই মাস আমদানি মাছ না থাকায় আমাদের ব্যবসা একটু খারাপ যাচ্ছিল তবে দুই একদিন ধরে মাছ আসতে শুরু করাই এখন ভালো যাচ্ছে।’

কারফিউরও প্রভাব পড়েছে মিঠা পানির মাছের দামে। খুলনা, সাতক্ষীরাসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে মাছবাহী গাড়ি আসেনি গত সপ্তাহে। গাড়ি ভাড়া বাড়া ও সরবরাহ কমায় কেজিতে ২০-৫০ টাকা বাড়তি মিঠা পানির মাছের।

বৈরি আবহাওয়ায় কক্সবাজারের চিত্রও একই। সাগরে যেতে পারেনি প্রায় ৫ হাজার ট্রলার। হাতেগোনা কিছু ট্রলার উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরতে গেলেও তারা মাঝপথ থেকে ফিরেছে অনেকটা শূন্য হাতে। জ্বালানি তেল, চাল, ডাল, পানিসহ প্রয়োজনীয় রসদ নিয়ে এখনও কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীতে নোঙর করে আছে শত শত ট্রলার।

বৈরি আবহাওয়া সাগরে যেতে পারেনি মাছ ধরার ট্রলার। ছবি: এখন টিভি

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে হাঁকডাক নেই পাইকার, আড়তদার, খুচরা ব্যবসায়ী, জেলে ও শ্রমিকদের। অধিকাংশ আড়ত বন্ধ রয়েছে মাছ না আসায়। অথচ স্বাভাবিক সময়ে এই অবতরণ কেন্দ্রে দৈনিক গড়ে ৩০ থেকে ৪০ মেট্রিক টন, এমনকি ৪০ থেকে ৫০ মেট্রিক মাছও খালাস হয়। এখানকার মাছ যায় সারাদেশে। শুধু এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে দিনে বেচাকেনা হয় দেড় থেকে দুই কোটি টাকার।

জেলেদের একজন বলেন, ‘আবহাওয়া খুব খারাপ তাই সমুদ্রে যেতে পারছি না। ঠিক হলেই মাছ ধরার জন্য বের হবো।’

কক্সবাজার অবতরণ কেন্দ্র মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘অতীতের মতো ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞার পর সাগরে মাছ ধরতে গেলে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। জেলেরা সমুদ্রে যাক আসার পরে বোঝা যাবে কি পরিমাণ মাছ পেয়েছে।’

কক্সবাজারে নিবন্ধিত মাছ ধরার ট্রলার আছে ৫ হাজার ২৫০টি। আর নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ৬৪ হাজার ৬৫০ জন।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর