রোজার দেড়মাস আগেই খাতুনগঞ্জে বাড়ছে ছোলা, ডাল, মসলাসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম। সরকার পর্যাপ্ত আমদানি, এলসি মার্জিন নূন্যতম রাখাসহ নানা পদক্ষেপেও, বাজারের চিত্রভিন্ন। ডলার সংকটে আমদানিপত্র খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। রমজানে দাম স্থিতিশলি রাখতে এখন থেকে আমদানি, সরবরাহ ও বাজার মনিটরিং এর দাবি তাদের।
মার্চের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হবে রমজান। সে হিসাবে বাকি দেড় মাস। কিন্তু এরইমধ্যে ছোলা, ডাল, মসলাসহ বিভিন্নপ্যণের দাম বাড়তে শুরু করেছে খাতুনগঞ্জে।
রমজানে সবচেয়ে বেশি চাহিদা বাড়ে ছোলার। গেল মাসে পণ্যটি মানভেদে ৮০-৮২ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৮ থেকে ৯৬ টাকায়। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ডাল জাতীয় পণ্যের দাম। প্রতিকেজি মুগ ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। এক মাস আগে যা ছিল ১১০ টাকা। প্রতি কেজি ৫০ টাকার মটর ডাল ব্যবধানে ৭০ টাকা। মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে মান ভেদে ১০২ থেকে ১৩৮ টাকা। যা এক মাস আগে ছিল ৯০ থেকে ১২০ টাকা।
ব্যবসায়ীদের দাবি, চলমান ডলার সংকটের কারণে আমদানি বিল পরিশোধে ব্যয় বেড়েছে। যার প্রভাব পড়ছে দামে। মেসার্স হাজী ট্রেডার্সের স্বত্তাধিকারী জয়নাল আবেদীন বলেন, 'ডলার সংকটসহ বিভিন্ন রকমের সংকটের কারণেই এলসি কনফার্ম দিচ্ছে না। আমি এলসি'র জন্য যে টাকাটা ব্যাংকে ফেলে রাখছি, ওইটার কোনো প্রফিট ব্যাংক আমাকে দিচ্ছে? দিচ্ছে না।আবার লোন থাকলে সেটার ইন্টারেস্টও আমার থেকে দিতে হচ্ছে।'
দেশে বছরে ডাল জাতীয় পণ্যের চাহিদা ২৫-২৬ লাখ টন। এরমধ্যে ১৫-১৬ লাখ টন আমদানি করে চাহিদা মেটাতে হয়। এনবিআরের তথ্য বলছে, গেলো ছয় মাসে ছোলার আমদানি বেড়েছে। গেলো ছয়মাসে ছোলা আমদানি হয়েছে ৩৭ হাজার ৬৯৪ টন। গেলবার যা ছিল ১৫ হাজার ৩৮ টন। প্রায় ৬ হাজার টন বেড়েছে মসুর ডাল আমদানিও। তবে ব্যাপক হারে কমেছে মটর ডাল আমদানি।
স্বস্তি নেই চিনির বাজারে। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে চিনির চাহিদা তুলনামূলক কম। তবে সরবরাহের কোনো সংকট নেই। রমজানকে কারসাজি ঠেকাতে মিল থেকে সরবরাহ ঠিক রাখার তদারকির দাবি তাদের।
মেসার্স ইবনাত ট্রেডার্স'র ম্যানেজার আবুল কাশেম বলেন, 'রমজান এলে তো সব ব্যবসায়ীরা কৌশলটা হাতে নেয়। তেল, চিনি, গম এগুলো কয়েকটা আইটেম আছে। রমজান এলে ব্যবসা করার জন্য পলিসি করে।'
বছরে খেজুরের চাহিদা ৮০ হাজার টন। যার সিংহভাগই লাগে রমজানে। তবে মৌসুম থাকায় এবার কয়েক মাস আগেই শতভাগ মার্জিনে খেজুরে এনেছেন আমদানিকারকরা। তাই খেজুর আর মসলার বাজারও উর্ধ্বমুখী।
খাতুনগঞ্জের মের্সার্স আল হারামাঈন ট্রেডিং এর স্বত্তাধিকারী মুহাম্মদ জাকের সওদাগর বলেন, 'আমরা কিন্তু বসে থাকিনি। সরকার এলসি মার্জিন কমাবে এ আশায় বসে থাকিনি। আমরা এলসি করে ফেলছি। অতিরিক্ত মার্জিনেও আমরা করছি। সেসময় ওখানে দামও ছিল নিম্নতম। এখন ওখানে কিন্তু দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু আমাকে সরকার নিম্নতম মার্জিনে করতে দিলেও পারছি না। কারণ যেটা ৪০০ ডলার ছিল সেটা ৭০০ ডলার হয়ে গেছে। তো নিম্নতম মার্জিনে এনেও আমার কুলাবে না।'
তিনি আরও বলেন, সরকার শুল্ক না কমালে হয়তো পণ্যের চাহিদা থাকবে, কিন্তু সবাই খেতে পারবে না।
মেসার্স আমেনা ট্রেডার্সের স্বত্তাধিকারী নুরুল আজিম মুন্না বলেন, মসলার বাজার ক্রেতার হাতের নাগালেই আছে। রমজান আসতে আসতে আরও নাগালে চলে আসবে।
রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখতে চিনি, ছোলা, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, ডাল, মটর, খেজুর ও মসলা আমদানিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ন্যূনতম পর্যায়ে নগদ মার্জিন রাখতে বলেছে। বর্তমানে চাহিদার চেয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি আমদানিপত্র খোলা হয়েছে বলে দাবি সরকারের। তবে ন্যূনতম মার্জিন কত হবে তা ঠিক করে দেয়ার দাবি আমদানিকারকদের।
খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি সোলায়মান বাদশা বলেন, 'ছোট ছোট পার্টিরা সে সুযোগ পাবে না। ব্যাংকের মালিক বা ব্যাংকের সাথে যাদের সম্পর্ক আছে তারা সে সুযোগটা গ্রহণ করবে। অনেক ক্ষেত্রে টাকা পাচারও হবে।'
তবে রমজানের আগে আমদানি, বাজারে সরবরাহ ও দাম নিয়ে কারসাজি কমাতে এখনই ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন ব্যবসায়িরা।