ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে রাজশাহীর বিপরীত দিকে নিউ ইয়র্ক সিটির অবস্থান। সেখানে এখন সময় সন্ধ্যা ৭টা ১১ মিনিট। চলছে ইফতারের আয়োজন। সূর্য অস্ত যাওয়ার অপেক্ষায়। রোজাদাররা চারপাশে জড়ো হচ্ছেন, ১৩ ঘণ্টার রোজা ভাঙার জন্য মাগরিবের আজানের অপেক্ষায় আছেন সবাই।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সময়ের এই আবর্তনের ফলে যে শহরগুলোতে রোজা শুরু হয় তার ঠিক বিপরীত গোলার্ধেই গিয়ে রোজা শেষ হয়। অর্থাৎ সূর্য পূর্ব থেকে পশ্চিমে সরে যায়। ঠিক এমনই কয়েকটি শহরের রোজাদারদের সাহরি ও ইফতারের সম্পর্কে জানবো এবার।
ভোর ৪.১৫ মিনিট। ব্রাজিলের রেসিফে রোজাদাররা তাদের সাহরি করেন ‘পাও ডি কুইজো’ নামক ময়দা এবং পনির মিশ্রিত রুটি দিয়ে।
আর ঠিক সেই একই সময় অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিট। রোজাদাররা প্রস্তুত হচ্ছেন ইফতারের জন্য। সিডনির হোটেল-রেস্তোরায় হরেক রকম হালাল খাবারের পসরা বসে রমজানে।
কানাডার উইনিপেগের রোজাদাররা যখন তাদের সাহরি শুরু করেন, তখন ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তার রোজাদাররা তাদের রোজা ভাঙ্গার প্রস্তুতি নেন। পবিত্র এই মাসে দ্বীপরাষ্ট্রের যেখানেই যান না কেন, ইফতারের জন্য সুস্বাদু ও পুষ্টি গুণসম্পন্ন খাবার পাওয়া যায়। যে খাবারগুলো রোজাদারদের শরীরের কর্মশক্তি বজায় রাখে।
ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কেলি অঞ্চলের মানুষ সাহরির জন্য টোস্ট আর অ্যাভোকাডো ফল সাজান। আর এদিকে ভারতের মুম্বাইতে তখন সন্ধ্যা ৬টা বেজে ৪৯ মিনিট। ইফতারের আয়োজনে থাকে ঘুগনি। যা তৈরি হয় মটর, টমেটো পেঁয়াজসহ বিভিন্ন উপাদান দিয়ে। মুম্বাইয়ের অলিগলিতে জমে ওঠা ইফতার বাজারের সাথে পুরান ঢাকার ইফতার বাজারের অনেক মিল পাওয়া যায়।
সন্ধ্যা ৬টা বেজে ৪২ মিনিট বাজলেই সুস্বাদু খাবারের হরেক রকমের পদ নিয়ে ইফতার করবেন পাকিস্তানের করাচীর ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। এদিকে করাচী থেকে ৯ হাজার ৫৯৭ কিলোমিটার দূরে আলাস্কার ফেয়ারব্যাঙ্কস। একই সময়ে সেখানে চলছে সাহরির আয়োজন। ওটসমিল দিয়ে সাহরি করেন এখানকার রোজাদাররা। ১৩ ঘণ্টার উপবাসে ওটস দেহের শক্তি বজায় রাখে।
হতভাগ্য গাজাবাসীর জন্য আলাদা করে সাহরি কিংবা ইফতার নেই। দুর্ভিক্ষের প্রাথমিক পর্যায়ে আছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। দখলদার ইজরায়েলের আগ্রাসন চলে সাহরি, ইফতারের সময়ও। জাতিসংঘের সহায়তায় কোনোমতে চলে এখানকার মানুষগুলোর খাবারের আয়োজন।
গাজার অপর প্রান্তেই রাশিয়ার আনাদিয়ার অঞ্চল। ভোর ৩টা ৫০ মিনিটে ওটসমিল এবং মধু মিশ্রিত কাশা নামক খাবার খেয়ে সাহরি সারেন এখানকার রোজাদাররা। এছাড়াও থাকে আমিষ শর্করাসহ খাবারের নানা পদ।
অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনের মুসলিমরা যখন সাহরি খেয়ে তাদের রোজা শুরু করেন, যুক্তরাজ্যের লন্ডনের মুসলিমরা তখন ইফতার করে রোজা শেষ করেন। ব্রিসবেন শহরে মুসলিম মোট জনসংখ্যার ১ দশমিক ৮ শতাংশ। আর লন্ডনে মুসলিম মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ। লন্ডন শহরে ২য় বৃহত্তম ধর্ম ইসলাম। এখানকার মুসলিম কমিউনিটিগুলোতে ইফতারের আয়োজন চলে মহা আড়ম্বরে।
বছরের অন্যান্য মাসের মধ্যে মাহে রমযানের অবস্থান আলাদা। বিশ্বব্যাপী রমজান উদযাপনের সময় নানা ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে গড়ে উঠেছে, যা শুধু পার্থক্যই তুলে ধরে না, বরং মুসলিম সমাজের ঐক্য ও সহানুভূতির প্রতীকও। আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে মানবতার কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিতে শেখায় মাহে রমজান।