সুপারশপ কিংবা শহরে মহল্লার দোকানে দু’একশ টাকায় মাশরুম কিনতে পাওয়া যায়। আর রেস্টুরেন্টের টেবিলেও হাজার টাকায় মেলে মাশরুমের নানা পদ। তবে যদি শোনেন মাশরুমের দাম কয়েক লাখ টাকা তাহলে? শুনতে অবাক মনে হলেও পৃথিবীতে এমন মাশরুম আছে যা বিক্রি হয় এমন দামেই। তাও আবার জন্মায় এশিয়ার মাটিতেই। কিন্তু কী নাম এই মাশরুমের? কেনইবা এটি এত দামি?
কোথায় জন্মায় এই মাশরুম?
নাম ইয়ার্তসা গুনবু। দেখতে অনেকটা শুয়োপোকার মত বলে ইংরেজিতে একে বলা হয় ক্যাটারপিলার ফাঙ্গাস। তিব্বতের এক দুর্গম এলাকায় পাওয়া যায় এই মাশরুম। এছাড়া নেপাল, ভুটান এবং ভারতের কিছু কিছু এলাকায়ও পাওয়া যায় এই মাশরুম।
মূলত শীতপ্রধান দেশে জন্মায় এটি। ভূমি থেকে প্রায় ৫ হাজার মিটার উচ্চতায় হিমালয়ের পাদদেশে ঘাসের নিচে জন্মায় এই মাশরুম। মাইনাস ৫ থেকে মাইনাস ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বেড়ে ওঠে এই মাশরুম। সারাবছর কিন্তু এই মাশরুম জন্মায় না। সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ এই সময়ে এটি জন্মায়। আর জন্মানোর পর মাত্র কয়েক সপ্তাহ বেঁচে থাকে। উৎপাদনও খুব বেশি হয় না।
কীভাবে জন্মায়?,
এই মাশরুমের জীবন চক্রও বেশ অদ্ভুত। ছত্রাকটি শুঁয়োপোকার পরজীবী হিসেবে বেড়ে ওঠে। একসময় শুয়োপোকাটি খেতে শুরু করে এই পরজীবী। আস্তে আস্তে ভেতরে থাকা পোকাটি মমির মতো ছত্রাক তৈরি করে। একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় বেড়ে ওঠার পর, শুঁয়োপোকাটি ছত্রাকের মাথা দিয়ে বের হয়ে যায়। শুঁয়োপোকার লম্বা আকৃতির কারণেই এই মাশরুম আকারে লম্বা ও চিকন হয়। পড়ে থাকে ছত্রাকের খোলসটি যার নাম ক্যাটারপিলার ফাঙ্গাস বা মাশরুম।
কোন কোন দেশে রপ্তানি হয় এবং এই মাশরুমের তৈরি নানা পদ?
তিব্বত এবং চীনে এই মাশরুম ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। জটিল ডায়বেটিস, অ্যাথলেটদের পারফরমেন্স বাড়াতে এবং অ্যান্টি এজিং হিসেবে বেশ কার্যকরী এই মাশরুম। ইতালি, স্পেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কিছু সুপার শপে পাওয়া যায় এই মাশরুম। ভোজনরসিকরা শখ করে কেনেন পৃথিবীর সবচেয়ে দামি এই মাশরুম। আবার পৃথিবীর বিলাসবহুল হোটেলগুলোতে স্যুপসহ নানান পদ থাকে এই মাশরুমের।
দামী এই মাশরুমের মূল্যটা এবার জেনে নেওয়া যাক।
হ্যাংলা পাতলা আকৃতির এই মাশরুম দেখে ভাববেন না এর দামটাও দেখতে এর আকৃতির মত। বলা যায় স্বর্ণের দামেরও কয়েকগুণ এই মাশরুমের দাম। ১ কেজি মাশরুম কিনতে আপনাকে খরচ করতে হবে পঞ্চাশ হাজার ডলার। টাকার হিসেবে এখন যা প্রায় পঞ্চান্ন লাখ টাকা। ২০১৭ সালে বাছাই করা ফ্রেশ ক্যাটারপিলার ফাঙ্গাস এর ১ গ্রামের দাম উঠেছিল ১ লাখ ৪০ হাজার ডলার। মূলত ঔষধি গুণাগুণ আর দুর্গম এলাকায় এবং অল্প পরিমাণে জন্মানোর কারণেই এর দামও সাধারণের নাগালের বাইরে।
এগুলো কারা খায়?
জানা গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদি এই মাশরুমের নিয়মিত গ্রাহক। তো কবে খাচ্ছেন শুয়োপোকার মাশরুম?
মাশরুমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা, প্রকারভেদ, চাষ পদ্ধতি নিয়ে কিছু প্রশ্নোত্তর-FAQ
প্রশ্ন: মাশরুম আসলে কী? এটি কি উদ্ভিদ নাকি অন্য কিছু?
উত্তর: মাশরুম হলো এক ধরনের ছত্রাক (Fungus)। এটি উদ্ভিদ বা প্রাণী কোনোটিই নয়; এটি ছত্রাক রাজ্যের (Fungi Kingdom) অন্তর্ভুক্ত। উদ্ভিদের মতো মাশরুম সূর্যালোক ব্যবহার করে খাদ্য তৈরি করতে পারে না, বরং পচনশীল জৈব পদার্থ থেকে পুষ্টি গ্রহণ করে জন্মায়।
প্রশ্ন: মাশরুমে প্রধানত কী কী পুষ্টি উপাদান থাকে?
উত্তর: মাশরুম হলো প্রোটিন, ভিটামিন বি (যেমন রিবোফ্লাভিন ও নিয়াসিন) এবং খনিজ পদার্থে (যেমন সেলেনিয়াম ও কপার) ভরপুর একটি খাবার। এটিতে শর্করা ও চর্বির পরিমাণ খুব কম থাকে। মাশরুমকে ভিটামিন ডি-এর একটি ভালো উৎস হিসেবেও বিবেচনা করা হয়, বিশেষ করে যখন এটি সূর্যালোকের সংস্পর্শে জন্মায়।
প্রশ্ন: মাশরুম খাওয়ার প্রধান স্বাস্থ্য উপকারিতা কী?
উত্তর: মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এর বিটা-গ্লুকান (Beta-Glucan) নামক উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, মাশরুমের নির্যাস ক্যান্সার প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে সাধারণত কোন ধরনের মাশরুমের চাষ বেশি হয়?
উত্তর: বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে বেশি চাষ হওয়া মাশরুমগুলো হলো:
- ওয়েস্টার মাশরুম (Oyster Mushroom / ঝিনুক মাশরুম)
- মিল্কি মাশরুম (Milky Mushroom)
- পোর্টোবেলো ও বাটন মাশরুম (Portobello and Button Mushroom)
প্রশ্ন: মাশরুম কিভাবে চাষ করা হয়? এর জন্য কি মাটির প্রয়োজন হয়?
উত্তর: না, মাশরুম চাষের জন্য মাটির প্রয়োজন হয় না। এটি সাধারণত স্ট্র (খড়), কাঠের গুঁড়ো, ধানের তুষ, বা কম্পোস্টের মতো জৈব পদার্থ ব্যবহার করে তৈরি করা একটি বিশেষ মাধ্যমে (substrate) চাষ করা হয়। এটি সাধারণত বদ্ধ ঘরে নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় জন্মায়।
প্রশ্ন: সব ধরনের মাশরুম কি খাওয়ার উপযুক্ত?
উত্তর: না, প্রকৃতিতে প্রাপ্ত সব মাশরুম খাওয়ার উপযুক্ত নয়। বন্য মাশরুমের একটি বড় অংশ বিষাক্ত (Poisonous) হতে পারে, যা খেলে গুরুতর অসুস্থতা এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। তাই শুধুমাত্র পরিচিত ও চাষ করা মাশরুমই খাওয়া উচিত। বন্য মাশরুম সংগ্রহ ও খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
